Militant Activity: মুক্তমনা-নাস্তিকদের খুনের নীতি ভারতে নয়, চরিত্র বদলাচ্ছে আনসার আল ইসলাম?

বাংলাদেশে পরপর যুক্তিবাদী ও উগ্র ইসলামি মতবাদের বিরুদ্ধে সরব থাকা লেখকদের পরপর খুনে জড়িত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (পূর্বতন আহসারুল্লাহ বাংলা টিম) তাদের কর্মসূচির…

বাংলাদেশে পরপর যুক্তিবাদী ও উগ্র ইসলামি মতবাদের বিরুদ্ধে সরব থাকা লেখকদের পরপর খুনে জড়িত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (পূর্বতন আহসারুল্লাহ বাংলা টিম) তাদের কর্মসূচির (militant activity) কিছু পরিবর্তন এনেছে বলেই জঙ্গি কার্যকলাপ বিশ্লেষণে উঠে আসছে। দেখা যাচ্ছে,সংগঠনটি এখন বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে ‘ব্রেন ওয়াশ’ কাজে বিশেষ সক্রিয়। অথচ এই সংগঠনটির সদস্যরা ২০১৩ সাল থেকে প্রকাশ্যে একাধিক বাংলাদেশি নাস্তিক মুক্তমনা বিজ্ঞানভিত্তিক লেখকদের কুপিয়ে খুন করেছে।

বাংলাদেশে জেএমবির নেটওয়ার্ক দূর্বল হতেই তার জায়গা নিয়েছিল নব্য জেএমবি ও আনসার জঙ্গিরা। তথ্য বিশ্লেষণে উঠে আসছে, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার বাংলাদেশি সংগঠন আনসার আল ইসলাম জঙ্গি গোষ্ঠি কয়েকবছর আগে পশ্চিমবঙ্গ, অসমে তাদের নেটওয়ার্ক পাকাপোক্ত করে। আনসার আল ইসলাম সংগঠনটি ভারতের মাটিতে মুক্তমনা-নাস্তিকদের নিশানায় রাখলেও  প্রকাশ্যে খুন সংঘটিত করার বিষয়ে সাবধানী। বরং তাদের লক্ষ্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের সংগঠনে কাউকে টেনে আনা।

   

বাংলাদেশের সিটিটিসি বিভাগ অর্থাত জঙ্গি দমন শাখার অভিযানে আদি জেএমবি, নব্য জেএমবি দুটি জঙ্গি সংগঠনের প্রথম সারির নেতৃত্ব হয় খতম নয় বন্দি। এছাড়াও উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি করা জামাত উল ইসলামির শীর্ষ নেতৃত্ব জেলে। কয়েকজন বাইরে। তবে তারাও গোয়েন্দাদের নজরবন্দি। গোয়েন্দা তথ্য বলছে জামাতের একাংশ নেতা ও সমর্থকদের সঙ্গে জেএমবির ঘনিষ্ঠতা আছে।

বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর থেকে সংগঠনের সদস্যরা আনসার আল ইসলাম নামে পরিচিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য, ভিন্ন নাম নিলেও একই সংগঠন সক্রিয় আছে। 

বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের খুনের ঘটনা ঘটছিল। ২০১৩ সালেই ইসলামের হেফাজতকারী বলে ঘোষণা করে আহসারুল্লাহ বাংলা টিম (এখনকার আনসার আল ইসলাম) ৮৪ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী ছিল। সেই ৮৪ জনের মধ্যে পরপর কয়েকজনকে খুন করা হয়।

যুক্তিবাদী লেখকদের বধ্যভূমি বাংলাদেশে নিহতদের তালিকা:
(১) আসিফ মহিউদ্দিন (২০১৩)
(২) আহমেদ রাজীব হায়দার (২০১৩)
(৩) সানিউর রহমান (২০১৩)
(৪) বাউল শফিউল ইসলাম (২০১৪)
(৫) অভিজিত রায় (২০১৫)
(৬) ওয়াশিকুর রহমান (২০১৫)
(৭) অনন্ত বিজয় দাস (২০১৫)
(৮) নীলয় চ্যাটার্জি নীল (২০১৫)
(৯) ফয়সাল আরেফিন দীপন (২০১৫)
(১০) আহমেদ রশিদ চৌধুরী টুটুল (২০১৫)
(১১) নাজিমুদ্দিন সামাদ (২০১৬)

ইসলাম বিরোধী প্রচারের অভিযোগ এনে উল্লিখিত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে খুন করেছিল জঙ্গিরা। হামলা হলেও কোনওরকমে বেঁচেছিলেন লেখক হুমায়ুন আজাদ (২০০৩)। পরে তিনি জার্মানিতে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০১৮ সালে জখম হন বিজ্ঞানভিত্তিক লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি পরে সুস্থ হন।

উল্লিখিত খুনগুলি বিশ্লেষণে উঠে আসছে ২০১৮ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশি যুক্তিবাদী লেখকদের উপর হামলা কমে এসেছে। আনসার আল ইসলাম সংগঠনটি এই সময় থেকে বাংলাদেশের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ, অসমসহ বিভিন্ন রাজ্যে জাল ছড়িয়েছে। বিশ্লেষদের ধারণা, ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের সংঘটিত করার কাজটি করে চলেছে আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন। নীতিগত দূরত্ব থাকলেও জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের ভারতীয় শাখা জেএমএইচের সাহায্য পাচ্ছে আনসার আল ইসলাম।

ভারতে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলি ও সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের যোগাযোগ নিবিড়। ভারতের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো  প্রবলভাবে সক্রিয় উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে। এদের মধ্যে আছে নাগাল্যান্ডের উগ্র খ্রিষ্টান প্রধান এনএসসিএন (খাপলাং), মণিপুরের হিন্দু গরিষ্ঠ মেইতেই ও খ্রিষ্টান গরিষ্ঠ সশস্ত্র সংগঠন, অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আলফা (স্বাধীনতা), সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠন আরসা, ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী এনএলএফটি।