মধ্যপ্রাচ্যে ইজরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের আঁচ এখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী (India-Bangladesh Border) এলাকায়ও পৌঁছেছে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার তেহট্টের বেতাই এলাকায় বসবাসকারী বেশ কয়েকটি পরিবার এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা অতিরিক্ত রোজগারের আশায় ইজরাইলে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তারা এখন এই যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়েছেন। ইজরাইল ও ইরানের মধ্যে মিসাইল হামলার ঘটনায় পরিবারগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও ভয় ক্রমশ বাড়ছে।
Read Hindi: मध्य पूर्व में महायुद्ध की आंच भारत-बांग्लादेश सीमा तक
তেহট্টের বেতাইয়ের বাসিন্দা গোস্টচরণ বিশ্বাস জানিয়েছেন, তার দুই ছেলে সঞ্জীব বিশ্বাস ও সুজিত বিশ্বাস ইজরাইলে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “ছেলেরা ফোনে জানিয়েছে, যখন-তখন মিসাইল হামলা হচ্ছে। হামলার ১০ মিনিট আগে মোবাইলে এলার্ম বাজে, তখন তাদের তড়িঘড়ি অত্যাধুনিক আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়। গত কয়েকদিন ধরে তারা বাঙ্কারেই কাটাচ্ছে।” গোস্টচরণের কণ্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আমরা খুব ভয়ে আছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আমার ছেলেরা যেন সুস্থভাবে ফিরে আসে।”
একইভাবে, বেতাই লালবাজারের বাসিন্দা আদুরি হালদারের মনও অশান্ত। তার ছেলে সদানন্দ হালদার তিন মাস আগে ঋণ করে ইজরাইলে কাজ করতে গিয়েছিলেন। আদুরি বলেন, “ঋণ করে ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম ভালো রোজগার হবে। কিন্তু এখন এই যুদ্ধের খবরে আমার রাতের ঘুম উড়ে গেছে।” তিনি প্রতিনিয়ত হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে ছেলের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
বেতাইয়ের বিথীকা ভক্তও একই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তার স্বামী দেবরাজ ভক্ত ইজরাইলে কর্মরত। বিথীকা বলেন, “আমি চাই, আমার স্বামী যেন দ্রুত ফিরে আসেন। এত আতঙ্কের মধ্যে আমরা কীভাবে থাকব?” তিনি আরও জানান, টেলিভিশনে যুদ্ধের খবর দেখে তাদের ভয় আরও বেড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেতাই ১ নম্বর ও ২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক যুবক ইজরাইলে কাজ করতে গিয়েছেন। শুধুমাত্র লালবাজার থেকেই প্রায় ৩০ জন কর্মী সেখানে রয়েছেন। এই পরিবারগুলোর মধ্যে এখন আতঙ্কের ছায়া। বেতাই-১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান শম্পা মন্ডল জানিয়েছেন, “আমরা পরিবারগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”
এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর আঁচ এখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ছোট ছোট গ্রামেও পৌঁছেছে। পরিবারগুলো আশা করছে, এই সংঘাত দ্রুত শেষ হবে এবং তাদের প্রিয়জনরা নিরাপদে ফিরে আসবেন।