লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট, CPIM রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম

রাজনীতির অনেক অর্থ বা সংজ্ঞা হতে পারে। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনীতির মূল লক্ষ্য ভোট। সেই লক্ষ্যেই এবার CPIM এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে। পার্টি ভাগ…

রাজনীতির অনেক অর্থ বা সংজ্ঞা হতে পারে। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনীতির মূল লক্ষ্য ভোট। সেই লক্ষ্যেই এবার CPIM এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে। পার্টি ভাগ হওয়ার পরে এই প্রথমবার কোনও সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে রাজ্য সম্পাদকের পদে আসীন করা হল। তিন দিনের রাজ্য সম্মেলনের পরে বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisements

বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস বা পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যবাসীকে ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ দিয়ে থাকে। বঙ্গবাসী প্রকৃত নিরপেক্ষ বলেও ফলাও করে প্রচার করা হয়। সেই রাজ্যেই নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা নেই সংখ্যালঘু ভোট। যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই সংখ্যালঘু ভোট আগে ছিল সিপিআইএম তথা বামেদের দখলে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরব হতেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদেও এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মমতা।

   

কিন্তু ২০০৬-০৭ সাল থেকে খেলা ঘুরতে শুরু করে। সংখ্যালঘু শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে মমতার। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যের অধিকাংশ সংখ্যালঘু ভোটের দখল নেয় তৃণমূল। ক্রমে সংখ্যালঘু শিবিরে দাপট বাড়তে থাকে ঘাস ফুলের। যার বড় প্রমাণ মিলেছে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। টিএমসি সরকারে।

মালদহ-মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় বড় সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করেও বিশেষ কিছুই করতে পারেনি সিপিআইএম বা কংগ্রেস। এবার তৃণমূলের সেই সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসাতে বা নিজেদের ভোট ব্যাংক পুনরুদ্ধার করতেই কী মহম্মদ সেলিমকে রাজ্য সম্পাদক করা হল? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফ-র সঙ্গে জোট করে বামেরা। কংগ্রেসের সঙ্গে আগেই জোট ছিল। এই আইএসএফ-র সঙ্গে জোট গঠনের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। ফুরফুরার পীরজাদাকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছিল ব্রিগেডের মঞ্চে। যার জেরে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ভোটের কারণে সেই অপমান হজম করে নিয়েছিলেন অধীর। ফুরফুরা লাগোয়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা থেকে বিধানসভা থেকে প্রার্থী হন মহম্মদ সেলিম। যদিও সাফল্য আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেখাপড়া করা একজন ধর্মগুরুর সঙ্গে প্রকাশ্য আঁতাত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সেই বিতর্ক এখন শেষ না হলেও অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছে। তবে সংখ্যালঘু ভোট যে রাজ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা বিলক্ষণ বুঝেছে সিপিআইএম। আর ঠিক সেই সময়েই মহম্মদ সেলিমের মতো ব্যক্তিকে রাজ্য সম্পাদক করার পিছনে সেই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের তত্ত্ব উঠে আসছে আলোচনায়।

ধর্মনিরপেক্ষতা প্রমাণে ধর্মতলায় গোমাংস খেয়েছিলেন সিপিআইএম নেতা তথা সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। দাবি উঠতে থাকে, মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে শুকরের মাংস খাওয়ার। আবার যেসেই পুরনো কাসুন্দি যে ফের খুঁচিয়ে তোলা হবে তা বলাই বাহুল্য। ২০১৯ সালের মার্চে লোকসভা ভোটের আগে একটি হরিনাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মহম্মদ সেলিম কপালে তিলক কেটেছিলেন। সেই প্রকারের ধর্মনিরপেক্ষতায় চিঁড়ে ভিজবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।