Man kills daughter: স্ত্রীর ‘অবৈধ সম্পর্কে’র জেরে বাবার হাতে ৪ বছরের মেয়ে খুন

নদীয়া জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক ব্যক্তি তার চার বছরের কন্যাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে অভিযুক্তের স্ত্রীর কথিত…

Man Killing 4-Year-Old Daughter in Bengal's Nadia

short-samachar

নদীয়া জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক ব্যক্তি তার চার বছরের কন্যাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে অভিযুক্তের স্ত্রীর কথিত ‘অবৈধ সম্পর্ক’ নিয়ে দাম্পত্য কলহ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার, ১৪ মার্চ, নদীয়া জেলার ধুবুলিয়া থানার অধীনস্থ একটি গ্রামে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের এক আধিকারিক শনিবার জানিয়েছেন।

   

এই মর্মান্তিক ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি তার স্ত্রীর প্রতি দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ পোষণ করতেন এবং তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই কলহ চরমে পৌঁছে যায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত তার স্ত্রী বাড়িতে না থাকার সময় ঘরে ফিরে এসে এই জঘন্য কাণ্ড ঘটায়।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত তার চার বছরের মেয়েকে হত্যা করে মৃতদেহটি একটি নদীতে ফেলে দেয়। স্থানীয়দের সন্দেহ হওয়ায় তারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে এবং অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্ত স্বীকার করে যে, সে তার মেয়েকে খুন করেছে এবং মৃতদেহ নদীতে ফেলে দিয়েছে। পুলিশ পরে নদী থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “অভিযুক্ত তার স্ত্রীর কথিত অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। এই ক্ষোভ থেকেই সে তার মেয়ের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছি।” তবে, স্ত্রীর কথিত সম্পর্কের বিষয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এবং এটি তদন্তের মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩০২ ধারায় (খুনের অভিযোগ) মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে শনিবার স্থানীয় আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের মানসিক অবস্থা এবং ঘটনার পটভূমি সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য তদন্ত চলছে।

এই ঘটনায় ধুবুলিয়া এলাকার বাসিন্দারা গভীর শোকে মুহ্যমান। একজন প্রতিবেশী বলেন, “এটা কল্পনাও করা যায় না যে একজন বাবা তার নিজের মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলতে পারে। আমরা শিশুটির হাসিমুখ বারবার দেখেছি। এই ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে।” আরেকজন গ্রামবাসী বলেন, “দম্পতির মধ্যে ঝগড়া হতো, কিন্তু এমন কিছু ঘটবে ভাবিনি। অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্তের পরিবার গ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে বসবাস করছে। তবে, তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে উত্তেজনা ছিল বলে গ্রামের লোকজনের মধ্যে আলোচনা হতো। এই ঘটনার পর গ্রামে এক ধরনের ভয় ও উৎকণ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে পারিবারিক সহিংসতা এবং নারী ও শিশুদের প্রতি অপরাধের বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা পারিবারিক সম্পর্কের অবক্ষয় এবং মানসিক চাপের পরিণতি হতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে এমন চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমাজের জন্য উদ্বেগজনক। এটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক সুস্থতার উপর আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখায়।”

ধুবুলিয়া থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। নদীয়া জেলা পুলিশ সুপার অতিরিক্ত তথ্যের জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন এবং অভিযুক্তের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পিছনে আরও কোনও ব্যক্তি জড়িত আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নদীয়ার এই মর্মান্তিক ঘটনা একটি শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং একটি পরিবারকে ভেঙে দিয়েছে। অভিযুক্তের এই কাণ্ড তার ক্ষোভের পরিণতি হলেও, এটি সমাজের সামনে বড় প্রশ্ন তুলেছে—কীভাবে এমন ঘটনা রোধ করা যায়? তদন্ত শেষে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র সামনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আপাতত, গ্রামবাসী এবং পুলিশ শিশুটির জন্য ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।