কলকাতা: বাংলায় ভোটার তালিকা পুনর্মূল্যায়নের এসআইআর (Special Summary Revision) প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি সরাসরি জাতীয় নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখে এসআইআর প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করার দাবি জানালেন। তাঁর অভিযোগ—নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এহেন গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, ফলে গুরুতর ভুলভ্রান্তি, ভয় এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের উপর।
বিএলওদের দুর্দশা তুলে ধরে কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বিএলওদের ওপর “অসাধ্যসাধন চাপে” ফেলা হয়েছে।
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই, তবুও তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশাল সংখ্যক ফর্ম যাচাই ও আপলোড করতে হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ—কলকাতার সিইও দপ্তর সাহায্য করার বদলে বিএলওদের ‘ভয়’ দেখাচ্ছে, শোকজ করা হচ্ছে, এমনকি ‘কঠোর ব্যবস্থা’-রও হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি লিখেছেন, কমিশন গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি দেখতে চাইছে না।
মানুষের আতঙ্ক চরমে, মৃত্যুর অভিযোগও সামনে Mamata Letter to EC SIR Halt
এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন মানুষের আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে—এ কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ভুলভ্রান্তির আশঙ্কায় বহু মানুষ উদ্বিগ্ন। তৃণমূল আগেই দাবি করেছে—এসআইআর সংক্রান্ত চাপ এবং আতঙ্কেই রাজ্যে কয়েকটি মৃত্যু ঘটেছে।
মালবাজারে এক মহিলা বিএলও-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনাও চিঠিতে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবারের দাবি—এসআইআরের চাপেই তিনি চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী; এবার সেই অবস্থানই সরকারি চিঠিতে স্পষ্ট হল।
৪ ডিসেম্বরের ডেডলাইনে প্রশ্ন
প্রশাসনিক প্রধানের আশঙ্কা—বর্তমান পরিস্থিতিতে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বিধানসভাভিত্তিক সমস্ত ভোটারদের তথ্য আপলোড করা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।
তাঁর মতে, এত চাপের মধ্যে ভুল, অসম্পূর্ণ বা তাড়াহুড়োতে জমা পড়া ফর্মের সংখ্যা বাড়বে, যার ফলে প্রকৃত ভোটাররা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বিশাল।
কমিশনের হস্তক্ষেপের আবেদন
এসআইআর পরিস্থিতিকে “উদ্বেগজনক” বলে বর্ণনা করে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জরুরি হস্তক্ষেপ, পর্যাপ্ত সময় বৃদ্ধি এবং সবচেয়ে বড় কথা, এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছেন।
বাংলায় মাঠপর্যায়ের প্রশাসন, রাজনৈতিক উত্তাপ, এবং মানুষের উদ্বেগ—এসআইআর বিতর্কে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। এখন দেখার, নির্বাচন কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর এ চিঠির জবাবে কোন পথে হাঁটে।


