মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি: বাংলা ভাষা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতি গঠন সম্ভব নয়

মঙ্গলবার কামারপুকুরের সভা মঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বিজেপি বলে বাংলা বলে কোনও ভাষাই নেই! শুনে রাখুন, বাংলা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতি তৈরি হত না। বাংলাই ভারতের সংস্কৃতির পথিকৃৎ।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিজেপির কথিত ভাষা বিদ্বেষ এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি অবমাননার প্রতিবাদে সোচ্চার হন।

Advertisements

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্মভিটে কামারপুকুর থেকেই সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবমাননা করার চক্রান্ত চলছে, আর তার বিরুদ্ধে এবার প্রতিবাদে গর্জে উঠবে গোটা বাংলা। তিনি বলেন, “বাংলাভাষাকে অসম্মান করবেন না, মাতৃভাষা নিয়ে খেলবার চেষ্টা করবেন না। এই বাংলাই ভারতবর্ষকে নবজাগরণের পথ দেখিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “রামকৃষ্ণদেব সর্বধর্ম সমন্বয়ের যে বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, তা আমাদের পথ দেখায়। বেলুড় মঠে যখন মুসলিম দরগা দেখেছিলাম, জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন? মহারাজেরা জানিয়েছিলেন, স্বামীজির সময় থেকেই এটা রয়েছে। তাহলে এখন বিজেপি কেন এই মেলবন্ধনকে ভাঙতে চাইছে?”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দেন, “আমরা ধর্ম শিখেছি স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংস, মা সারদা, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্রদের থেকে। বিজেপির থেকে ধর্ম শিখতে হবে না আমাদের। আমরা যেটা শিখেছি, সেটা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছে, কেউ তা ভাঙতে পারবে না।”

Advertisements

তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বাংলার বিভিন্ন মনীষীদের অবদান। বলেন, “জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’ লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘বন্দে মাতরম’ লিখেছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। নেতাজি বলেছিলেন ‘জয় হিন্দ’। এঁরা সবাই বাঙালি, বাংলাই এদের ভাষা। আর আপনারা সেই ভাষাকেই ছোট করছেন!”

তিনি জানান, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল, তখন রাজ্য সরকার তৎপর হয়ে ট্রাস্টির হাতে তা তুলে দেয়। সিস্টার নিবেদিতার বাড়িও অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এঁরা আমাদের প্রাণপুরুষ, যাঁদের ছাড়া সমাজ চলে না। তাঁদের প্রতি আমাদের সম্মান থাকা উচিত। ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানিয়েই আমাদের জীবন গড়ে তুলতে হবে।”

শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন সময় এসেছে ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিকতা, সৌজন্য, নৈতিকতা ও ভদ্রতা রক্ষা করার। বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষাকে অবজ্ঞা করলে তা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। বাংলা নিজেই এক ঐতিহ্য, এক সাংস্কৃতিক পরিচয়। বিজেপিকে সেই পরিচয়কে সম্মান করতে শিখতে হবে।”