ঝাড়গ্রাম: ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ফের রাজপথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার সকালে সড়কপথে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। পথে পথে জনসংযোগে অংশ নেন, স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। আর সেই সময়েই কংসাবতী নদীর উপরে সেতু নির্মাণ ঘিরে প্রশাসনকে বড় নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনওভাবেই যেন এই সেতু নির্মাণে উচ্ছেদ না হয়— স্পষ্ট বার্তা দিলেন জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারকে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরেই কংসাবতী নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসীরা। তবে আশঙ্কাও ছিল— সেতু তৈরির কারণে তাঁদের ঘরবাড়ি কিংবা জমি হারাতে হতে পারে। সেই সংশয়ই দূর করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জনতার সামনেই ঘোষণা করে বললেন, “কংসাবতীর উপর সেতু হোক, কিন্তু এক ইঞ্চি জমিও উচ্ছেদ হবে না। কোনও বাড়িঘর ভাঙা চলবে না।”
মমতার এই বক্তব্য শুনেই স্বতঃস্ফূর্ত হাততালি পড়ে। অনেকেই বলেন, “এমনই তো নেতা দরকার, যিনি কাজও করেন, আবার মানুষের কথাও ভাবেন।” স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু মাণ্ডি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে আমাদের কথা শুনলেন, এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে। আমাদের বাড়িঘর থাকবে জেনেও এখন নিশ্চিন্ত। ওঁকে অনেক ধন্যবাদ।”
সূত্রের খবর, প্রশাসনিক স্তরে ইতিমধ্যেই কংসাবতী নদীর উপর একটি নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেতুটি হলে ঝাড়গ্রাম শহরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রামের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে। তবে প্রাথমিক ডিজাইন এবং নকশা তৈরির সময় যেসব জমি অধিগ্রহণের তালিকায় ছিল, সেগুলিকে আপাতত বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন জনসংযোগের সময় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ভাষা আন্দোলনের লড়াই শুধু বাংলার ভাষা নয়, বাঙালির অধিকার ও অস্তিত্বের লড়াই। আর এই অধিকার রক্ষা করতে হলে উন্নয়নের সঙ্গেও সহানুভূতির প্রয়োজন।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঝাড়গ্রাম সফর ঘিরে জেলার রাজনৈতিক তাপমাত্রাও বেড়েছে। একদিকে প্রশাসনিক বার্তা, অন্যদিকে জনসংযোগ— দু’দিকই মিলিয়ে এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সবমিলিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের ঝাড়গ্রাম সফরে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ, ভাষা আন্দোলনের বার্তা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি— সবকিছুই ছিল একত্রে। তাঁর কংসাবতী সেতু সংক্রান্ত উচ্ছেদবিরোধী নির্দেশ এক মানবিক রাজনীতির দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন বহু মানুষ।