এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)।কথা দিয়ে, কথা রাখলেন তিনি। ভিনরাজ্যে কর্মরত বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকরা যে বারবার বাঙালি-বিদ্বেষ এবং নানা রকম বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছেন, সেই আবহেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করলেন নতুন প্রকল্প— ‘শ্রমশ্রী’।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভিনরাজ্য থেকে যাঁরা কাজ ছেড়ে বা সমস্যার কারণে ফিরে আসছেন, তাঁদের কর্মসংস্থান এবং আর্থিক সুরক্ষার দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফেরত আসা প্রতিটি শ্রমিককে আলাদা করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এরপর তাঁরা এক বছরের জন্য মাসে ৫০০০ টাকা করে সরাসরি সরকারি সাহায্য পাবেন। কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এই আর্থিক সহায়তা চলবে। অর্থাৎ, নতুন কাজ খোঁজার চাপ ও সংসারের দায় সামলাতে সাময়িক সুরক্ষা দেবে এই প্রকল্প।
সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্তি
‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকরা পাবেন অন্য সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধাও।
স্বাস্থ্যসাথী: পরিবার পিছু চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা।
খাদ্যসাথী: সুলভ মূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ।
উৎকর্ষ বাংলা: নানান দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “শ্রমশ্রী শুধু আর্থিক সাহায্যের প্রকল্প নয়, এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও উদ্যোগ।”
গত কয়েক বছরে বহু বাঙালি শ্রমিক ভিনরাজ্যে গিয়ে নির্মাণ শ্রমিক, হোটেল কর্মী বা অন্যান্য অদক্ষ কাজে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু নানা সময়ে তাঁদের উপর আক্রমণ, বৈষম্য এবং নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ উঠে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তার কারণে পরিবার সমেত তাঁদের বাংলায় ফিরতে বাধ্য হতে হয়েছে। এই বাস্তব পরিস্থিতি থেকেই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
এই প্রকল্প কার্যত বাংলার শ্রমিকদের জন্য এক কল্পতরু হিসেবে হাজির হল। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা না হওয়ার অভিযোগ আগেই তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই প্রেক্ষিতেই এই ঘোষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একদিকে যেমন শ্রমিক পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন, অন্যদিকে রাজ্যের প্রতি মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় করলেন।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে শ্রমশ্রী প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। শুধু ভিনরাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিক নয়, বাংলার গ্রামীণ বা শহুরে বেকার যুবক-যুবতীদের জন্যও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলতে চাইছে সরকার। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিল্পভিত্তিক প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন উদ্যোগ ‘শ্রমশ্রী’ কেবল একটি আর্থিক সহায়তার প্রকল্প নয়; এটি বাংলায় ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন, তাতে নিঃসন্দেহে ভরসা পেল হাজার হাজার পরিবার। ভিনরাজ্যের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়ে কর্মসংস্থানের নতুন ভরসা তৈরি করল এই প্রকল্প।