কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি মমতাকে ‘নমক হারাম’ বলে অভিহিত করেছেন। অধীরের দাবি, ২০১১ সালে কংগ্রেসের দয়ায় তৃণমূল দলটি গঠন হয়েছিল। সেই সময় কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় আসা সম্ভব ছিল না। অধীর চৌধুরী জানান, তৃণমূলের নেতৃত্বে থাকা মমতা কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
অধীর চৌধুরী শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, ‘নমক হারাম বলা হয় তাদের যারা অন্যের সাহায্য নিয়ে একদিন নিজের স্বার্থ হাসিল করার পর, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন বা প্রতারণা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতিতে নমক হারামির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।’ তার মতে, মমতা কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেসের সঙ্গে আস্থাহীনতার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ২০১১ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা সোনিয়া গান্ধী এবং প্রণব মুখার্জির সমর্থন ছাড়া মমতার তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারত না বলে অধীর মন্তব্য করেন।
অধীর চৌধুরী আরও বলেন, ‘কংগ্রেস আপনাকে যে আসনটি দিয়েছিল, তা ছিল কংগ্রেসের একটা বড় প্রেরণা। কংগ্রেস চেয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় ক্ষমতায় আসুন। কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে কংগ্রেসের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।’ তিনি জানান, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত নিন্দনীয়। কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার সম্পর্কের এই শত্রুতা বাংলার রাজনীতিতে এক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার তৃণমূলের কর্মীসভায় শুভ্রাংশু সম্পর্কে অধীর বলেন, ‘এটা দিদি এবং খোকাবাবুর দল। এক ধরনের ওয়ান ওমেন পার্টি, যেখানে বাকিরা ক্রীতদাসের মতো কাজ করে। তৃণমূলের কোন সদস্যের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই। তারা শুধুমাত্র দিদির ইশারা অনুসরণ করে।’ অধীর আরও বলেন, তৃণমূলের মধ্যে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা সম্ভব নয়, সবাই এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে কাজ করে।
ভুয়ো ভোটারের প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা ভুয়ো ভোটারে পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল এবং আইপ্যাক এই কাজ করে। তারা মাঠে গিয়ে দেখছে কোথায় কে মৃত এবং সে মৃত ব্যক্তি ভোট দিচ্ছে। ভোটার লিস্টে সঠিক নাম ঠিকানা থাকা উচিত, তবে এখানে তার বিপরীত ঘটছে।’ অধীর দাবি করেন, বাংলায় প্রায় ৪৫ লক্ষ ভুয়ো ভোটার রয়েছে এবং এভাবে ভোট লুণ্ঠন হচ্ছে।
এছাড়া, তিনি বলেন, ‘বাংলায় যদি ভুয়ো ভোটার ঢুকে পড়ে, তবে তার মানে কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতা রয়েছে। সঠিকভাবে ভোটার তালিকা তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের। এবং যদি ভুয়ো ভোটার ঢুকে পড়ে, তাহলে তার সঙ্গে কেন্দ্রের ভূমিকা থাকতে পারে।’ অধীর আরও বলেন, ‘এই ভুয়ো ভোটারদের সংখ্যা অত্যধিক। এটা এক ধরনের নির্বাচনী দুর্নীতি যা গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে।’
এদিকে, অধীর চৌধুরী তৃণমূলের সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বাংলায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তার মতে, ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রের উপর আঘাত আসছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে এবং বাংলা থেকে ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা কমাবে।
অধীর চৌধুরী এই ঘটনাকে শুধু তৃণমূলের জন্য নয়, বাংলা রাজনীতির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে এই ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।