মালদহ: জমি দখলকে কেন্দ্র করে চরম হিংসার সাক্ষী রইল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর। গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে শ্লীলতাহানির মতো নারকীয় ঘটনার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) এক পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মহিলার স্বামীকেও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি ঘটেছে মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। অভিযোগ, কুশিদা পঞ্চায়েতের সদস্য আব্দুল কাইয়ুমের মদতে এবং তাঁর দলবল নিয়ে ১৫ জুন সকালে অভিযুক্তরা হঠাৎই আক্রান্ত দম্পতির বাড়িতে চড়াও হয়। গৃহস্বামীকে টার্গেট করে প্রথমে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁকে লোহার রড ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। পরে যখন স্ত্রী স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন, তখন তাঁর উপরও শুরু হয় হামলা।
অভিযোগ, তাঁর পরনের কাপড় ছিঁড়ে তাঁকে অর্ধনগ্ন করে শ্লীলতাহানি করা হয়। শুধু তাই নয়, ছুরি দিয়ে চোখের কাছে আঘাত করা হয়, যার ফলে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তাঁরা দেড় বিঘা জমি প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছেন, যার বিরোধিতা করাতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। অভিযুক্তরা সকলেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বলে অভিযোগ। আক্রান্ত দম্পতির দাবি, তারা এখন আতঙ্কে ঘরছাড়া। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলেও অভিযুক্তদের হুমকিতে তাঁরা বাড়িতে ঢুকতে পারেননি।
এই ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে, অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুল কাইয়ুম সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। রাজনৈতিক চক্রান্ত করে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস বা আমি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নই।”
অন্যদিকে, অভিযোগে নাম থাকা এক ব্যক্তি জানান, পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই সংঘর্ষ। তাঁর দাবি, জমির বা পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, “এটা লজ্জার বিষয়। তৃণমূল বলে মা-মাটি-মানুষের সরকার, অথচ এখানে মা-ই নিরাপদ নন। রাজ্যে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।”
রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এলাকায়। আক্রান্ত দম্পতির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী ও বিজেপি নেতৃত্ব।