পীরের দান করা জমি চুরি! কাঠগড়ায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি

শতাব্দী প্রাচীন পীরের নামে থাকা জমি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) হরিহরপাড়া থানার হুমাইপুর গ্রামে। অভিযোগ, পীরের নামে থাকা ১০ শতক জমি বেআইনিভাবে নিজের…

Land Donated by Sufi Saint Illegally Transferred? TMC Block President Accused in Murshidabad"

শতাব্দী প্রাচীন পীরের নামে থাকা জমি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) হরিহরপাড়া থানার হুমাইপুর গ্রামে। অভিযোগ, পীরের নামে থাকা ১০ শতক জমি বেআইনিভাবে নিজের মায়ের ও ছেলেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আহতাবউদ্দিন শেখ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।

জমির রেকর্ড নিয়ে চাঞ্চল্য
স্থানীয়দের দাবি, হুমাইপুর গ্রামের ওই জমিটি বহু বছর আগে এক প্রভাবশালী পীর জনগণের কল্যাণের জন্য দান করেছিলেন। সেই জমিতে আজও প্রতিবছর ওরস হয়, মেলা বসে, এবং আশপাশের গ্রামের মানুষজন সেখানে মানত করে থাকেন। হঠাৎ করেই জানা যায়, ওই জমিটি সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী এখন আর পীরের নামে নেই। পরিবর্তে রেকর্ডে উঠে এসেছে আহতাবউদ্দিন শেখের মা ও ছেলেদের নাম।

   

গণবিক্ষোভে উত্তাল এলাকা
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হুমাইপুরে রীতিমতো উত্তেজনা ছড়ায়। শুক্রবার সকাল থেকেই গ্রামের শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে হরিহরপাড়া ব্লকের BL&RO (Block Land and Revenue Office) ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের প্রশ্ন—“যে জমি বহু বছর ধরে পীরের নামে চলে আসছে, সেখানে আজ হঠাৎ করে একজন রাজনৈতিক নেতার পরিবার কীভাবে মালিক হলেন?”

গ্রামবাসীদের বক্তব্য, প্রশাসনের মধ্যেই প্রভাব খাটিয়ে জমির কাগজপত্রে জালিয়াতি করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্ত ও জমি পুণরায় পীরের নামে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

কী বলছেন অভিযুক্ত ব্লক সভাপতি?
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আহতাবউদ্দিন শেখ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য,

Advertisements

“এই জমি আসলে আমার নানার ছিল। বহু আগেই তিনি জমিটি এক পীরকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। তবে পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সেটি আমার মায়ের নামে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এখন সেটি আমার ছেলের নামে হয়েছে। পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আদালতে মামলা চলছে। আমি আদালতের রায়ে পূর্ণ আস্থা রাখি।”

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, জেলা ভূমি ও রাজস্ব দফতর (BL&RO) সূত্রে জানা গেছে, তারা অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছেন। এক আধিকারিক বলেন,

“এমন সংবেদনশীল জমি নিয়ে কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। তদন্তের ভিত্তিতে যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, “এটা তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতির নমুনা। ধর্মীয় আস্থার স্থানে হাত দিয়ে জমি লুট করছে শাসকদলের নেতারা।” কংগ্রেসও দাবি করেছে, “পীরের জমিতে লালসা দেখিয়ে তৃণমূল প্রমাণ করে দিল, তাদের কাছে কিছুই পবিত্র নয়।”

এই ঘটনা শুধুই জমি সংক্রান্ত অনিয়ম নয়, এটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও জনআস্থার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে কি না, এখন সেটাই দেখার। তবে এই ঘটনার জেরে হুমাইপুরে তৃণমূলের ভিত কিছুটা হলেও নড়ে গেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।