মমতার অক্সফোর্ড আমন্ত্রণ পত্র ফাঁস করলেন কুনাল ঘোষ

মুখ্যমন্ত্রীর অক্সফোর্ড বিতর্কে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ পত্র সমাজমাদ্ধমে পোস্ট করে আগুনে ঘি ঢাললেন কুনাল ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা (এলওপি) তথা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/wmremove-transformed-1.jpeg

মুখ্যমন্ত্রীর অক্সফোর্ড বিতর্কে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ পত্র সমাজমাদ্ধমে পোস্ট করে আগুনে ঘি ঢাললেন কুনাল ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা (এলওপি) তথা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মার্চ মাসের শেষে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন সফর ‘ভুয়ো’। এই অভিযোগ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না, বরং তিনি কেলগ কলেজে ‘সামাজিক উন্নয়ন: নারী ও শিশুদের ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। কেলগ কলেজ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ৩৬টি কলেজের মধ্যে একটি। তিনি বলেন, “এটাকে ‘অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা’ হিসেবে প্রচার করা একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য করা হচ্ছে। যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কোনও কলেজে বক্তব্য রাখা কে ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভেন্ট’ বলা যায় না, তেমনই এটাও তাই।”

অধিকারী আরও অভিযোগ করেন, এটি মুখ্যমন্ত্রীর ইমেজ বাড়ানোর জন্য একটি পাবলিক রিলেশন কৌশলের অংশ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই ধরনের প্রচারের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায়? এটা স্পষ্ট যে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।” তিনি একটি আরটিআই কর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামীর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো চিঠির স্ন্যাপশটও শেয়ার করেছেন, যেখানে মমতার সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জবাবে বলা হয়েছে, তারা “বিভাগ, কলেজ বা সোসাইটিগুলোতে আয়োজিত সব ইভেন্টের কেন্দ্রীয় লগ রাখে না।”

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে শেয়ার করা এবং কুনাল ঘোষের সমাজ মাদ্ধমে প্রকাশিত একটি চিঠিতে দেখা গেছে, কেলগ কলেজের প্রেসিডেন্ট এবং অক্সফোর্ডের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর জনাথন মিচি স্বাক্ষরিত একটি আমন্ত্রণপত্রে মমতাকে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চিঠির বিষয়বস্তুতে লেখা আছে, “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার আমন্ত্রণ” এবং তারিখ ছিল ৭ মার্চ, ২০২৪, অর্থাৎ সফর ঘোষণার ঠিক এক বছর আগে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “অক্সফোর্ডের মেল স্পষ্ট বলছে, তারা সব ইভেন্টের লগ রাখে না। তাহলে বিজেপি এবং সিপিআই(এম) কীভাবে এটাকে ভুয়ো বলছে? বাম ও ডানপন্থীরা মমতার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলছে, কারণ তারা একই মুদ্রার দুই পিঠ।”
বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা অমিত মালবিয়া এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতারণার শিল্পে পারদর্শী। এই ধরনের ভুল উপস্থাপনা ভারতের সুনাম নষ্ট করে। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। অক্সফোর্ড যদি তাঁকে ভবিষ্যতে বক্তা হিসেবে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ না করে, তবে তা অন্যায় হবে।” সিপিআই(এম)-এর নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, “মমতা অক্সফোর্ডের নাম ব্যবহার করে ভুয়ো আমন্ত্রণের আড়ালে নিজের ইমেজ তৈরি করছেন।”

Advertisements

এই বিতর্কে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি বিরোধীদের ঈর্ষা ও মমতার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রতি হিংসা। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর সমর্থকরা এই সফরকে ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনা আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।