রায়গঞ্জ, ২ নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন রায়গঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং রায়গঞ্জে অবসরপ্রাপ্ত MiG-21 যুদ্ধবিমান স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি সম্প্রতি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা তৈরি হয়েছে — তবে কি বিজেপিতেই ফিরতে চলেছেন একসময়ের গেরুয়া শিবিরের এই মুখ?
সাম্প্রতিক একটি চিঠিতে কৃষ্ণ কল্যাণী ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমর প্রীত সিং (PVSM, AVSM)-এর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, রায়গঞ্জে একটি অবসরপ্রাপ্ত MiG-21 বিমান স্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক, যাতে মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, ভারতের প্রতিরক্ষা ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে ও অনুপ্রাণিত হয়।
চিঠিতে তিনি লেখেন —
“এই ধরনের প্রতীকী বিমান কেবল একটি প্রদর্শনী নয়, এটি জাতীয় গর্বের প্রতীক। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এর পাশ দিয়ে হাঁটবে, দেখবে, এবং দেশপ্রেমের বার্তা পাবে। এটি তাদের মধ্যে সাহস ও আত্মত্যাগের মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলবে।”
তিনি প্রস্তাব দেন, রায়গঞ্জের কোনো বিশিষ্ট সরকারি বিদ্যালয়ের সামনে বা জেলা জাদুঘরের পাশে (উত্তর দিনাজপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের কাছে) এই বিমান স্থাপন করা যেতে পারে।
✈️ মিগ-২১: ভারতের গর্বের প্রতীক
চিঠিতে কৃষ্ণ কল্যাণী MiG-21 বিমানের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথাও স্মরণ করেছেন।
তিনি লিখেছেন —
“১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে মিগ-২১ অসাধারণ ভূমিকা নিয়েছে। এটি শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয়, এটি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার ইতিহাসের এক অমূল্য অধ্যায়।”
তিনি আরও জানান, এই উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে প্রতিরক্ষা, বিমানচালনা ও প্রকৌশলের মতো ক্ষেত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে। “আমরা ভারতীয় বিমানবাহিনীর সহযোগিতায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাই,” — উল্লেখ করেছেন বিধায়ক।
⚙️ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতার আশ্বাস
চিঠিতে কৃষ্ণ কল্যাণী আশ্বাস দিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা কর্তৃপক্ষ বিমানটির প্রদর্শন ও সংরক্ষণে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তিনি লিখেছেন —
“ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রোটোকল অনুযায়ী বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা চাই, এটি এমন এক স্মারক হয়ে উঠুক যা আগামী প্রজন্মের দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলবে।”
🗳️ রাজনৈতিক বার্তা না কি জনসংযোগ কৌশল?
তবে এই দেশপ্রেমের আবেগের পেছনে রাজনৈতিক হিসেবও দেখছে বিশ্লেষক মহল।
কৃষ্ণ কল্যাণী ২০২১ সালে বিজেপি টিকিটে রায়গঞ্জ থেকে জয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন, এমনই দাবি স্থানীয় সূত্রের।
এই প্রেক্ষাপটে তাঁর দেশপ্রেমমূলক পোস্ট এবং বায়ুসেনাকে শ্রদ্ধা জানানোর বার্তা রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা ছড়িয়েছে — তবে কি তিনি আবারও বিজেপির দরজায় কড়া নাড়ছেন?
তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন,
“তিনি অনেক দিন ধরেই দলের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখছেন না। এই ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত জনসংযোগের মাধ্যমে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।”
অন্যদিকে, বিজেপির এক স্থানীয় নেতা জানান,
“দেশপ্রেম আর সেনাবাহিনীর সম্মান করা কোনো দলের বিষয় নয়। তবে কৃষ্ণবাবু যদি আবার গেরুয়া পরিবারে ফিরতে চান, দরজা সবসময় খোলা।”
যুদ্ধবিমান মিগ-২১ শুধু এক প্রযুক্তির নাম নয়, এটি ভারতের বীরত্বের প্রতীক। কৃষ্ণ কল্যাণীর এই উদ্যোগে রায়গঞ্জবাসী গর্ব অনুভব করছেন ঠিকই, তবে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেবে — সেই উত্তর এখনো সময়ের অপেক্ষায়।



