কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিল দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। সোমবার ভারতের আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, রাজ্যের আকাশে আর বর্ষার মেঘ নেই। সারা রাজ্যজুড়ে আগামী সাতদিন শুষ্ক আবহাওয়াই বিরাজ করবে।
আইএমডির রিপোর্ট অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাহারের রেখা বর্তমানে করওয়ার, কলবুর্গি, নিজামাবাদ, কাঁকড়, কেয়নঝরগড়, সাগরদ্বীপ হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ গোটা পশ্চিমবঙ্গ এখন মৌসুমী বায়ুহীন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের কোথাও বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস—যা স্বাভাবিকের কাছাকাছি। আর্দ্রতার মাত্রা কিছুটা থাকলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে বলে জানিয়েছে আইএমডি।
এবারের বর্ষা তুলনামূলকভাবে আগেভাগেই শেষ হলো। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টিপাত কমে গিয়েছিল। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আবহাওয়া দফতর ঘোষণা করল মৌসুমী বায়ুর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।
আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমী বায়ুর এই বিদায় রাজ্যে শীত আগমনের বার্তা বহন করছে। সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা বিদায় নেয়। এর পর থেকেই রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা ভাব দেখা দেয়।
গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা নানা রূপে দেখা দিয়েছে—কখনও অতি ভারী বৃষ্টি, কখনও আবার সপ্তাহের পর সপ্তাহ বৃষ্টি শূন্য দিন। দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায়, বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়ায় মাঝেমধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হলেও তা বর্ষার ধারাবাহিকতাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি।
এখন রাজ্যের আবহাওয়া একেবারেই শুষ্ক। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় বড় পার্থক্য না থাকলেও রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা ভাব ধীরে ধীরে বাড়বে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই উত্তরবঙ্গে সকালের কুয়াশা দেখা দিতে পারে।
কৃষক মহলের মতে, এই শুষ্ক সময় ফসল কাটার জন্য আদর্শ। দীর্ঘ বর্ষা শেষে এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন খরিফ ফসল ঘরে তোলার। আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকলে ফসল নষ্টের আশঙ্কা অনেকটাই কমবে বলে আশা কৃষকদের।
তবে, বৃষ্টিহীন আবহাওয়া চললে শহুরে অঞ্চলে ধুলো ও দূষণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। নাগরিকদের মাস্ক পরার পাশাপাশি শরীর হাইড্রেট রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। বর্ষার বিদায়ের সঙ্গে শুরু হলো শীতের প্রতীক্ষা। আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও বৃষ্টি আর নয়—এখন বাংলার আকাশে কেবলই শুষ্কতার ইঙ্গিত।