রোজভ্যালির আসল নথি ফাঁস, মিঠুনকে কেন ছাড়া হল, প্রশ্ন কুণালের

রোজভ্যালি কাণ্ড ঘিরে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এলেন অভিনেতা ও বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। রোজভ্যালির সঙ্গে তাঁর আর্থিক চুক্তির তথাকথিত নথি সামনে আসার পর ফের…

Mithun and kunal clash

রোজভ্যালি কাণ্ড ঘিরে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এলেন অভিনেতা ও বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। রোজভ্যালির সঙ্গে তাঁর আর্থিক চুক্তির তথাকথিত নথি সামনে আসার পর ফের একবার তাঁকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই নথি প্রকাশ্যে এনে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন— “যেখানে রোজভ্যালি কাণ্ডে এতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তদন্ত চলছে, সেখানেই মিঠুন চক্রবর্তী কেন রেহাই পাচ্ছেন?”

Advertisements

রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ বলেন, “এই নথি থেকে স্পষ্ট, রোজভ্যালির সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর ২ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। রোজভ্যালির অনুষ্ঠান এবং প্রমোশনাল কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন। তাহলে কেন সিবিআই তাঁকে ডাকছে না? উনি কি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত? বিজেপিতে যোগ দিলে কি সব অপরাধ ধুয়ে যায়?”

Advertisements

এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বাংলার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। যদিও মিঠুন চক্রবর্তীর তরফ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই অভিযোগের প্রভাব পড়তে পারে তাঁর ভাবমূর্তিতে।

এর মধ্যেই আরও একটি ইস্যু ঘিরে মিঠুন চক্রবর্তী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি রাজ্যে বিজেপির একাংশের বাঙালিবিদ্বেষী মন্তব্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বহু বিশিষ্ট বাঙালি। সেই প্রসঙ্গ টেনে মিঠুনকে আক্রমণ করেছেন একাধিক বুদ্ধিজীবী। তাঁদের দাবি, মিঠুন একজন বাঙালি হয়েও বাংলার অসম্মানকে কখনও প্রকাশ্যে নিন্দা করেননি। বরং বিজেপির হয়ে প্রচারে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন যা এই বাংলার সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদাকে আঘাত করে।

একজন বিশিষ্ট কবি বলেন, “একজন অভিনেতা যখন রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়ান, তখন তাঁর দায়িত্ব বাড়ে। কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তী যেভাবে বাংলার বিরুদ্ধে একপাক্ষিক অবস্থান নিয়েছেন, তাতে তাঁকে ‘পরিযায়ী বাঙালি’ বলাই যথাযথ।” অন্য এক অধ্যাপক আরও তীব্র ভাষায় বলেন, “যিনি রোজভ্যালির সঙ্গে আর্থিক চুক্তিতে যুক্ত ছিলেন, তিনি আজ বাংলার মানুষকে নীতি শেখান! এটা কি দ্বিচারিতা নয়?”

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকেও এই দুই ইস্যু—রোজভ্যালি ও বাঙালিবিদ্বেষ—নিয়ে ধারাবাহিক আক্রমণ জারি রাখা হয়েছে। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “মিঠুনবাবু কি রাজ্যবাসীকে বোঝাতে চান, তিনি রোজভ্যালির নির্দোষ মুখ? তাঁর চুক্তি, লেনদেনের তথ্য সামনে এসেছে। সিবিআই কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? আর বিজেপির বাঙালিবিদ্বেষী অবস্থান নিয়ে তিনি চুপ কেন?”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি ফাঁসের ঘটনাটি শুধু একটি দুর্নীতির অভিযোগ নয়—এটি এখন রাজনীতির নৈতিকতা, পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত এবং ‘তারকা রাজনীতিবিদ’দের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। মিঠুন চক্রবর্তীর মত একজন জনপ্রিয় মুখ যখন দুর্নীতির মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে জড়িয়ে পড়েন, তখন তার প্রভাব সাধারণ মানুষের মনে গভীর হয়।

এখন দেখার, এই বিতর্কে মিঠুন চক্রবর্তী কী অবস্থান নেন। তিনি কি নিজে থেকে বক্তব্য রাখবেন? নাকি বিজেপির তরফ থেকে তাঁর সাফাই দেওয়া হবে? আপাতত রাজ্য রাজনীতির মূল আলোচনার কেন্দ্রে রইলেন ‘ডিস্কো ডান্সার’ মিঠুন চক্রবর্তী।