কলকাতা: উৎসবের আগে ফের বেড়ে গেল কলকাতার বায়ুদূষণ। শনিবার শহরের উত্তর ও দক্ষিণের একাধিক এলাকায় বায়ু মান সূচক (AQI) ২৫০–এর কাছাকাছি পৌঁছে যায়, যা ‘পুওর’ বা ‘দূষিত’ শ্রেণিতে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দুই দিনে, অর্থাৎ কালীপুজোর আগেই, বায়ুর মান আরও খারাপ হতে পারে।
তবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (WBPCB) জানিয়েছে, দূষণ বৃদ্ধির পেছনে বাজি নয়, বরং আবহাওয়ার পরিবর্তনই মূল কারণ। মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি সরে যাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা হ্রাস পেয়েছে এবং সূক্ষ্ম ধূলিকণাগুলি (PM 2.5) বাতাসে স্থির হয়ে পড়েছে। এর ফলেই AQI হঠাৎ বেড়েছে বলে পর্ষদের বক্তব্য।
পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “যদি কোথাও কিছু বাজি পোড়ানো হয়ে থাকে, সেটি খুবই সীমিত। দূষণের প্রধান কারণ এটি নয়। বরং আবহাওয়ার কারণে বাতাস ভারী হয়ে পড়ায় ধূলিকণা বাতাসে মিশে থাকছে।”
শনিবার দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরে AQI ছিল ২৪২, আর উত্তর কলকাতার সিন্থি এলাকায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তা পৌঁছে যায় ২৫২–তে। দুই ক্ষেত্রেই দূষণের স্তর ‘পুওর’। এর আগের দিন, ১৭ অক্টোবর, AQI ছিল যাদবপুরে ১৭৯ ও সিন্থিতে ১৮৫।
পর্ষদ জানিয়েছে, উৎসবের দিন কালীপুজোয় (২১ অক্টোবর) ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলবে। যাঁরা বাজি পোড়ানো বা অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখবেন, তাঁরা WBPCB–র কন্ট্রোল রুমে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
অন্যদিকে, শহরের অন্যান্য অংশে দূষণের মাত্রা কিছুটা কম ছিল। বালিগঞ্জে AQI ১৪৩, রবীন্দ্র সরোবরে ১১৬, ফোর্ট উইলিয়ামে ১১৫ এবং সল্টলেকে ১০৮—সবই ‘মডারেট’ শ্রেণিতে। অর্থাৎ এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, বাজি পোড়ানো বেড়ে গেলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ বলেন, “পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরদারি দুর্বল হওয়ায় দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে প্রচুর অবৈধ বাজি কলকাতায় ঢুকছে। ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় বাজির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে AQI দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। ১৯ অক্টোবরের মধ্যে AQI ‘ভেরি পুওর’ বা ‘সিভিয়ার’ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, AQI যদি ২০০–৩০০ হয়, তাহলে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা, গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। ৩০০–৪০০ হলে দীর্ঘসময় সংস্পর্শে থাকা মানুষদের শ্বাসযন্ত্রে রোগ হতে পারে। আর ৪০০–৫০০ হলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
WBPCB জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আবহাওয়ার আর্দ্রতা বাড়লে দূষণের মাত্রা কিছুটা কমবে বলে আশা। একই সঙ্গে মানুষকে উৎসবের সময় শুধুমাত্র সবুজ বাজি ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।