সবুজ বাজির সময় বেঁধে দিল কলকাতা পুলিশ

কলকাতা: আসন্ন দীপাবলি ও কালীপুজোয় দূষণ নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ নিল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি (Green Firecrackers) পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে এবং সেটিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

Advertisements

লালবাজারের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২০ অক্টোবর (দীপাবলি ও কালীপুজোর দিন) রাতে রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজি পোড়ানো যাবে। এই সময়ের বাইরে কোনও অবস্থাতেই বাজি পোড়ানো যাবে না— দিনে হোক বা রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে শুধু দীপাবলিই নয়, ছটপুজোর দিন (২৮ অক্টোবর) ও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবুজ বাজি পোড়ানোর অনুমতি থাকবে। এই সময়সীমার বাইরে বাজি পোড়ানো বা বিক্রি করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে গণ্য হবে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা নির্দেশ দিয়েছেন, সমস্ত থানার অফিসার ইনচার্জ (OC) ও ডিভিশনাল ডেপুটি কমিশনারদের (DCP) যেন এলাকায় কঠোর নজরদারি চালাতে হয়। বিশেষ টহলদারি দল গঠন করা হয়েছে যাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবৈধ বাজি বিক্রি ও শব্দবাজির ব্যবহার বন্ধ করা যায়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি রাজ্য সরকার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (WBPCB)-কে নির্দেশ দিয়েছে, দীপাবলির পর বাজি বিক্রির রিপোর্ট জমা দিতে। আদালতের মতে, শহরে দূষণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, তাই প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া জরুরি।

লালবাজার জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে দীপাবলির পরে বায়ু মান সূচক (AQI)-এর মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ বছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। পুলিশ বলছে, সবুজ বাজি ব্যবহারে সালফার, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং কার্বন নির্গমন অনেক কম হয়, ফলে পরিবেশের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

Advertisements

পরিবেশবিদদের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “সবুজ বাজি প্রচলন করা মানে দূষণ কমিয়ে উৎসব পালন করা। প্রশাসনের উচিত নিয়ম কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা,” বলেন এক বিশেষজ্ঞ।

শহরের সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। উৎসবের আনন্দ যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে, সে বিষয়েই জোর দিচ্ছে প্রশাসন। যদি কেউ নিয়ম ভেঙে নিষিদ্ধ বাজি ব্যবহার করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে Noise Pollution Act এবং IPC-এর আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, “এই নির্দেশিকা শুধুমাত্র নিয়ম নয়, এটি পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক। আমরা চাই, নাগরিকরা আনন্দ করুন কিন্তু দায়িত্বশীলভাবে।”

লালবাজারের বার্তা স্পষ্ট— “সবুজ উৎসবই হোক এ বছরের দীপাবলি।” এই সিদ্ধান্তের ফলে শহরে বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিয়ে নতুন করে শৃঙ্খলা আনতে পারবে প্রশাসন, এমনটাই আশা শহরবাসীর।