কলকাতা: দুর্গাপুজো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করে এবার কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে নয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। দুর্গাপুজো চলাকালীন বড় কোনও অশান্তি বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশকে প্রশংসা করেছেন। এবার লক্ষ্য — কালীপুজো এবং দীপাবলিকেও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, দূষণমুক্ত ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করা।
এই উদ্দেশ্যেই আগামী ১৫ অক্টোবর বিকেল চারটে থেকে আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মা, শহরের সব থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি), পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা এবং কলকাতার নামী কালীপুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধি।
লালবাজার সূত্রে খবর, এবছর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শব্দবাজি রুখতে এবার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এলাকায় অবৈধ বাজি বিক্রি ও ফাটানো রুখতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাতে। শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মাইক ব্যবহারের সময়সীমা কঠোরভাবে মানতে হবে — রাত ১০টার পর কোনওভাবেই লাউডস্পিকার বাজানো যাবে না।
এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় থাকবে — শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, দূষণ রোধ, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, এবং প্রতিমা বিসর্জন সংক্রান্ত নিয়মাবলি। পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মা নিজে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন।
জানা গিয়েছে, শহরের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে বাড়ানো হবে পুলিশ মোতায়েন, চালানো হবে ড্রোন নজরদারি, এবং মোবাইল প্যাট্রল ভ্যানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়াও, কলকাতা পুরসভা, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, সিইএসসি এবং দমকল দফতরের প্রতিনিধিরাও এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন, যাতে উৎসব চলাকালীন সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, দীপাবলি ও কালীপুজোর সময় শহরে সবচেয়ে বেশি শব্দবাজি ফাটানো হয় এবং নিষিদ্ধ বাজির ব্যবহারের অভিযোগও বাড়ে। তাই এবছর থেকেই শুরু হচ্ছে বিশেষ টহলদারি টিম, যারা রাতভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে। কোনও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নগরপাল মনোজ ভর্মা জানিয়েছেন, “কলকাতার মানুষ উৎসব ভালোবাসেন, কিন্তু আনন্দ যেন কারও অসুবিধার কারণ না হয়। তাই আমরা কড়া নজর রাখব, তবে আনন্দে ভাটা না পড়ে সে দিকেও সমান দৃষ্টি থাকবে।”
লালবাজারে এখন প্রস্তুতি তুঙ্গে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা শিবির চলছে, বাজি ফাটানো ও শব্দদূষণ নিয়ে লাগানো হচ্ছে পোস্টার ও ব্যানার। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন। এবারের কালীপুজো ও দীপাবলি হবে নিরাপদ, দূষণমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ উৎসব — এমনটাই নিশ্চিত করতে চায় কলকাতা পুলিশ।