এক সময় বাংলার কালীপুজো ও দীপাবলি মানেই ছিল অমাবস্যার অন্ধকারকে কাটিয়ে ১০৮টি মাটির প্রদীপে আলোর উৎসব। প্রতিটি পুজো মণ্ডপ, প্রতিটি ঘরের বারান্দা, ছাদ, উঠোন — সবখানে প্রদীপের কোমল আলো জ্বলে উঠত ভক্তিভরে। হাওড়ার (Howrah) পিলখানার ফকির বাগান লেন ও সেকেন্ড বাই লেনের কুমোরপাড়ায় তখন ছিল ব্যস্ততা তুঙ্গে। বছরের এই সময়টাই ছিল তাঁদের রোজগারের মূল আশ্রয়।
কিন্তু সময় বদলেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন শহর-গ্রাম সর্বত্রই বদলে গেছে আলোর চেহারা। রকমারি ইলেকট্রিক বাল্ব, রঙিন এলইডি লাইট আর টুনি বাল্বের দাপটে আজ আর কেউ মাটির প্রদীপ কেনেন না বললেই চলে। ফলে রোজগার হারিয়ে ফেলে, প্রায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন ঐতিহ্যবাহী এই প্রদীপ শিল্পীরা।
আগে কালীপুজোর এক মাস আগে থেকেই হুকুম পড়ে যেত, হাজার হাজার প্রদীপ চাই। এখন চারদিকে শুধু প্লাস্টিক আর ইলেকট্রিক লাইট। এমনই আক্ষেপ হাওড়ার ফকির বাগান লেনের প্রবীণ মৃৎশিল্পী বিপুল পাল-এর। তিনি আরও জানান, একটা সময় তাঁদের গোটা পরিবার মিলে দিন-রাত খাটতেন। চাকা ঘোরাতেন, মাটি কাটতেন, রোদে শুকোতেন, চুল্লিতে পোড়াতেন। আজ সেই চাকা যেন থেমে গেছে। আগের মতো হাট নেই, ক্রেতা নেই, নেই পুজো মণ্ডপে মাটির প্রদীপের প্রয়োজনও। এইসব সস্তা ও ঝলমলে আলো কেবল দেখতে আকর্ষণীয়ই নয়, বারবার ব্যবহারযোগ্য বলেও অনেকের কাছে বেশি সুবিধাজনক। অথচ মাটির প্রদীপ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয় — সেখানেই হার মানছে প্রাচীন এই শিল্প।