HomeWest BengalKolkata Cityআন্দামান সাগরে সৃষ্ট ‍‘শক্তি’ ঘূর্ণিঝড়ে বিপদে কলকাতাসহ সারাবাংলা

আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ‍‘শক্তি’ ঘূর্ণিঝড়ে বিপদে কলকাতাসহ সারাবাংলা

- Advertisement -

Cyclone Shakti: পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বুধবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার দাপট দেখা গেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। একই সঙ্গে, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতেও ভারী বৃষ্টির ফলে অনেক এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত জল জমে গেছে।

এদিকে, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ইতিমধ্যেই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ আন্দামান সাগর, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং উত্তর আন্দামান সাগরের কিছু অংশে প্রবেশ করেছে। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে এই মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ আরব সাগর, মালদ্বীপ, কোমোরিন অঞ্চল, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের আরও কিছু অংশ, সম্পূর্ণ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, বাকি আন্দামান সাগর এবং মধ্য বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

   

আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ু কেরালায় সাধারণত ১ জুনের পরিবর্তে এবার ২৭ মে-র মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারে। এছাড়া, আঞ্চলিক আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আন্দামান সাগরের উপর একটি উচ্চতর বায়ু ঘূর্ণায়মান সিস্টেমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, যা ১৬ থেকে ২২ মে-র মধ্যে একটি নিম্নচাপে রূপান্তরিত হতে পারে। পূর্বাভাসকারীদের মতে, এই সিস্টেমটি ২৩ থেকে ২৮ মে-র মধ্যে শক্তিশালী হয়ে ‘শক্তি’ নামে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি-র মঙ্গলবারের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আজ, ১৩ মে, ২০২৫-এর সকাল ০৩০০ ইউটিসি-তে আন্দামান সাগরের উপর ১.৫ কিলোমিটার থেকে ৭.৬ কিলোমিটার উচ্চতায় একটি উচ্চতর বায়ু ঘূর্ণায়মান সিস্টেম অবস্থান করছে, যা উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঝুঁকে রয়েছে।”

এদিকে, কর্ণাটকের বিভিন্ন জেলায় আবহাওয়া বিভাগ হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। কলকাতার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে, আইএমডি ২০২৫ সালের মৌসুমি মরশুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এল নিনোর মতো পরিস্থিতি, যা ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যুক্ত, এবার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

কলকাতায় বৃষ্টির প্রভাব ও স্থানীয় পরিস্থিতি
কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে জনজীবন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গাছ উপড়ে পড়ায় রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় অনেক এলাকায় অন্ধকারে ডুবে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছে। তবে, বৃষ্টির তীব্রতার কারণে অনেক নিম্নাঞ্চলে জল জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং অফিসে যাতায়াতকারীদের মধ্যে বৃষ্টির কারণে বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে।

আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র সম্ভাবনা
আন্দামান সাগরে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। এই ঘূর্ণিঝড় যদি শক্তিশালী হয়, তবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। উপকূলীয় রাজ্যগুলোর প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদেরও গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কর্ণাটক ও দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টির প্রভাব
কর্ণাটকের বিভিন্ন জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে মঙ্গলবারের ভারী বৃষ্টির কারণে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে জল জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাস্তাঘাটে হাঁটু পর্যন্ত জল জমে যাওয়ায় দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হচ্ছে। কর্ণাটকের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে, যা কৃষকদের জন্য সুখবর হলেও শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতি ও ভারতের কৃষি
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের কৃষি অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মৌসুমি বায়ু সময়মতো এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত নিয়ে এলে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সুবিধা হয়। আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ধান, গম, তুলো এবং অন্যান্য ফসলের জন্য সুখবর। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফসলের ক্ষতি করতে পারে, যা কৃষকদের জন্য চিন্তার বিষয়।

কলকাতা, কর্ণাটক এবং দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে চলমান বৃষ্টি ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আবহাওয়া বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতি ভারতের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত হলেও, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

- Advertisement -
online desk
online desk
Get Bengali news updates, Bengali News Headlines , Latest Bangla Khabar, Bengali News from Kolkata
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular