প্রাথমিকে ২৩ হাজার ১৪৫ জন শিক্ষকের বদলির পথে শিক্ষা দফতর

West Bengal Recommends Overhaul of Primary Teacher Appointment Process

কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামোয় ভারসাম্য আনতে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর (West Bengal primary teacher)। রাজ্যে ২৩ হাজার ১৪৫ জন প্রাথমিক শিক্ষককে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষক রয়েছেন, সেখান থেকে অতিরিক্ত শিক্ষককে পাঠানো হবে শিক্ষক স্বল্পতার শিকার স্কুলগুলিতে।

Advertisements

তবে এই বদলি প্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ নিজের জেলার মধ্যেই। শিক্ষা দফতর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিজের জেলাতেই বদলি হবেন, কিন্তু বাড়ির একেবারে কাছের স্কুলে পাঠানো হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। বদলি হবে সম্পূর্ণ স্কুলের চাহিদা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে।

   

সরকারি তথ্যানুসারে, বর্তমানে সারা রাজ্যে ২৩ হাজার ৯৬২ জন প্রাথমিক শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল, পশ্চিমবঙ্গে ২ হাজারেরও বেশি প্রাথমিক স্কুলে একজনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। ফলে কোথাও একজন শিক্ষককেই একাধিক শ্রেণির দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে, কোথাও আবার পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে শিক্ষক এনে দৈনিক ক্লাস করাতে হচ্ছে, আবার কোথাও পূর্ণভাবে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের বহু স্কুলে নিয়মিত পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছে।

এই গুরুতর সংকট সামাল দিতে ডিস্ট্রিক প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল (DPSC) প্রতিটি জেলা থেকে শিক্ষক ঘাটতি, উদ্বৃত্ত শিক্ষক সংখ্যা এবং শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করে স্কুল শিক্ষা দফতরে জমা দেয়। সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেই শিক্ষক পুনর্বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

জেলা ধরে ধরে এই বদলির তালিকা তৈরি হয়েছে। জানা যাচ্ছে, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ একাধিক জেলায় শিক্ষক শূন্য স্কুলের সংখ্যা সবথেকে বেশি। অন্যদিকে কলকাতা, হাওড়া, হুগলির মতো কিছু জেলায় একাধিক স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক বেশি রয়েছেন, ফলে সেখান থেকেই শিক্ষক পুনর্বণ্টন করা হবে।

Advertisements

শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, এটি কোনো সাধারণ বদলি প্রক্রিয়া নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারসাম্য ফেরানোর লক্ষ্যে ‘শিক্ষক রিডিস্ট্রিবিউশন’ কর্মসূচি। এর ফলে স্কুলগুলিতে শিক্ষক–পড়ুয়া অনুপাত অনেকটাই সঠিক জায়গায় আনা সম্ভব হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের উপস্থিতি নিয়মিত হলে পড়ুয়াদের শেখার মান উন্নত হবে, ঝরে পড়া কমবে এবং সরকারি স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের আস্থা ফিরবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

বদলির খবর সামনে আসার পর শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য, নিজের জেলার মধ্যেই বদলি হলেও যদি প্রত্যন্ত বা দূরবর্তী এলাকায় পোস্টিং দেওয়া হয়, তাহলে দৈনন্দিন যাতায়াত, সময় ও খরচ সব মিলিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ছাত্রস্বার্থকে মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনিক স্তরে সর্বাধিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে।

অভিভাবক মহলের একাংশ বলছেন, বহু বছর ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছে সাধারণ পরিবারের শিশুরা। তাই বদলির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ হলে শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতেও, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে যে সময় লাগে, সেই দীর্ঘমেয়াদি অপেক্ষার মধ্যে এই পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়া অনেকটাই সমাধান দেবে।

জানা গেছে, বদলির চূড়ান্ত তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা হবে এবং আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে, যাতে নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার সময় থেকেই ছাত্রছাত্রীরা পর্যাপ্ত শিক্ষক পায়।