পিকনিকে টার্গেট সেট, গার্ডরুমে নিগ্রহ! ‘দাদা’র যৌ*নসুখে ছাত্রী বাছাই করত প্রমিত-জইব

কলকাতা: ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা, ব্ল্যাকমেল, ভয় দেখিয়ে ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে বাধ্য করা—এই সব অপরাধ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ছিল একটা সুপরিকল্পিত, পেশাদার পদ্ধতির অংশ। এমনই…

Kolkata College Sexual Harassment

কলকাতা: ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা, ব্ল্যাকমেল, ভয় দেখিয়ে ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে বাধ্য করা—এই সব অপরাধ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ছিল একটা সুপরিকল্পিত, পেশাদার পদ্ধতির অংশ। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ উঠে এসেছে গ্রেপ্তার হওয়া মনোজিৎ মিশ্র ওরফে ‘ম্যাঙ্গো’ এবং তার দুই সহযোগী জইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে যা উঠে এসেছে, তা শুধু ঘৃণ্য নয়—নক্কারজনক।

পিকনিক ছিল এই চক্রের প্রধান ‘অপারেশন জোন’

তদন্তকারী অফিসারদের মতে, কলেজ ক্যাম্পাস এবং পিকনিক ছিল এই চক্রের প্রধান ‘অপারেশন জোন’। প্রভাবশালী রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং ক্যাম্পাসের ‘দাদা’ পরিচয় কাজে লাগিয়ে ম্যাঙ্গো নিজের প্রভাব বিস্তার করত। অভিযোগ, প্রতি বছর দু’বার করে কলেজের পিকনিক আয়োজন করত সে। উদ্দেশ্য ছিল, নতুন মেয়েদের শিকার করা। সেই পিকনিকে কারা যাবে, কে কোথায় বসবে সবটাই আগে থেকেই পরিকল্পিত। প্রথম বর্ষের কোন ছাত্রী ‘টার্গেট’ হবে, তা আগেই ঠিক করে দিত মনোজিৎ। তার পরের কাজ ছিল তার শাগরেদদের।

   

ছাত্রীদের অশালীন ভিডিও রেকর্ড Kolkata College Sexual Harassment

সূত্রের দাবি, জইব ও প্রমিত নিজেরাই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, ‘ম্যাঙ্গো দাদার’ নির্দেশে তারাই সেই নির্দিষ্ট ছাত্রীর অশালীন ভিডিও রেকর্ড করত, নির্জন জায়গা খুঁজে দিত, এমনকি ফেরার সময় দাদার পাশে বসানোর ব্যবস্থাও করত। অভিযোগ, পিকনিকের সেই সমস্ত দৃশ্য ভিডিও করে রাখত ম্যাঙ্গো নিজে বা তার দলের কেউ। তার পর সেই ভিডিও দেখিয়ে ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেল করা হত-‘ফেল করিয়ে দেওয়া হবে’, ‘কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হবে’, কিংবা ‘ভিডিও বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে’। ভয়, মানসিক চাপ ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবেই কেউ কেউ বাধ্য হতেন ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে।

‘কম্প্রোমাইজ’-এর নামে নিগ্রহ

আর যেখানে সেই ‘কম্প্রোমাইজ’-এর নামে চরম শারীরিক নিগ্রহ চলত, তা ছিল কলেজেরই গার্ডরুম। অভিযোগ, সেখানে ছাত্রীদের একা ডেকে নিয়ে গিয়ে অশালীন আচরণ করত মনোজিৎ। কেউ বাধা দিলে চলে শারীরিক নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে।

Advertisements

নির্যাতনের শিকার বহু ছাত্রী এতদিন মুখ খুলতে পারেননি লোকলজ্জা, ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার ভয় কিংবা পরিবারে অপমানের আশঙ্কায়। কিন্তু সম্প্রতি একজন নির্যাতিতা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পর একে একে বাকিরাও সাহস করে এগিয়ে আসছেন। কেউ কলেজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, কেউ আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন চরম মানসিক ট্রমা।

পুলিশের দাবি, এ শুধু এক জনের বিকৃত মানসিকতা নয়, একটা রীতিমতো ‘সিন্ডিকেট’ চলত কলেজের ছায়ায়। এই চক্রের রাজনৈতিক মদত, প্রশাসনিক ‘সাপোর্ট’, এবং আরও কারা জড়িত থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্তে নতুন নতুন তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা প্রবল।