শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার বড়ঞার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার (Jiban Krishna) ১২ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে । এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্তের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করেছিল, এবং আজ কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তার শুনানি হয়েছে ।
এই মামলা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, কারণ ইডি দাবি করেছে যে জীবনকৃষ্ণ এই দুর্নীতির অন্যতম মূল চক্রী।গত ২৫ আগস্ট, ইডি জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করে। আজ আদালতে পেশ করার পর বিচারক তাকে ১২ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী আদালতে দাবি করেছিলেন যে, জীবনকৃষ্ণ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেনে জড়িত ছিলেন। তার স্ত্রী এবং বাবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা পড়েছে, তা নাকি এই দুর্নীতির ফল।
ইডি আরও অভিযোগ করেছে যে, জীবনকৃষ্ণ তদন্ত এড়াতে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং তার মোবাইল ফোন নর্দমায় ফেলে দিয়েছিলেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচারক তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জীবনকৃষ্ণের আইনজীবী এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন যে, তিনি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জীবনকৃষ্ণ গ্রেফতারের আগে তিনবার হাজিরা দিয়েছেন এবং তার স্ত্রীও তদন্তে সহযোগিতা করেছেন।
সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়া হয়েছে, এবং তারা এই গ্রেফতারিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। আইনজীবী আরও বলেন, “গ্রেফতারের এত তৎপরতা কেন, তা দেখা দরকার। আমরা জামিন বা মামলা থেকে মুক্তি চাইছি।”
এই মামলার তদন্তে ইডি জানিয়েছে যে, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জীবনকৃষ্ণ সাহা এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তাদের অভিযোগ, জীবনকৃষ্ণের স্ত্রী এবং বাবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকার উৎস সন্দেহজনক। তবে, জীবনকৃষ্ণ দাবি করেছেন যে, এই টাকা তার বাবার দেওয়া উপহার, এবং তার স্ত্রী এটিকে তার চাকরির আয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে, ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল, সিবিআই জীবনকৃষ্ণের কান্দির বাড়িতে টানা তল্লাশি চালায় এবং তাকে গ্রেফতার করে। তল্লাশির সময় তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। গ্রেফতারির পর থেকে জীবনকৃষ্ণ বেশ কয়েকবার আদালতে পেশের সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। জেল সূত্রে জানা গেছে, জামাইষষ্ঠীর দিনে তার পরিবারের সদস্যরা খাবার এবং উপহার নিয়ে এসেছিলেন, এবং পরিবারের সদস্যদের দেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
ইডি দাবি করেছে যে, তাদের হাতে জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে, যা তাকে এই দুর্নীতির মূল চক্রী হিসেবে চিহ্নিত করে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই গ্রেফতারিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে।
এই মামলার তদন্তে আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রসন্ন রায়ের নামও উঠে এসেছে, যিনি এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ দুর্নীতির কাজে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। সিবিআইয়ের দাবি, প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
জেডি ভ্যান্সের মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ‘Trump Is Dead’
আজকের শুনানি এই মামলার দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জীবনকৃষ্ণ সাহার জামিন মঞ্জুর হবে নাকি তাকে আরও হেফাজতে রাখা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র আগ্রহ রয়েছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নতুন মোড় আনতে পারে, এবং এর রাজনৈতিক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য হতে পারে।