হাওড়া (Howrah) শিল্পাঞ্চলকে বলা হতো প্রাচ্যের শেফিল্ড। কলকারখানার শহর হাওড়া, কুলি টাউন হাওড়া। সেই শিল্পাঞ্চলের একটি অগ্রগণ্য কারখানা ছিল জিকেডব্লিউ লিমিটেড (Gestkin)। ১৯২০ সালে ইংরেজ শিল্পপতি হেনরি উইলিয়াম হাওড়ায় একটি কারখানা স্থাপন করেন। তার নাম হেনরি উইলিয়ামস লিমিটেড।
সেখানে উচ্চমানের ছোট যন্ত্রপাতি তৈরি হতো। ক’বছরের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সুদূর বার্মিংহাম থেকে উন্নত স্টিল এনে তাকে যন্ত্রপাতি তে রূপ দেওয়া হতো।
১৯৩১ সালে ওই বার্মিংহাম শহরের বিখ্যাত গেস্ট কিন নেটফোল্ডস কোম্পানি এর সাথে যোগদান করলে হাওড়ার কারখানার নাম হয় গেস্ট কিন লিমিটেড। ১৯৫৬ সালে কলকাতা ও বোম্বের স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানির নাম নথিভুক্ত হয়।
কোম্পানির চারটি ডিভিশনের অন্যতম ছিল বল্টু ও নাট সেখানে হাজারো রকমের জোড়া দেওয়ার জিনিস তৈরি হতো। সে সেফটি পিনই হোক বা স্ক্রু বা নাট-বোল্ট। প্রিসিশনস এন্ড প্রেসিংস, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ফাউনড্রি ও স্যানকি ডিভিশন গুলিও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যেতে থাকে।
১৯৮৬ সাল থেকে শুরু হয় দুর্দিন। রাজ্যজুড়ে শ্রমিক অসন্তোষ, চাহিদা করে যাওয়া, মাত্রাছাড়া লোড শেডিং, রাজনৈতিক গুন্ডামি ইত্যাদি এই সম্ভাবনাময় কারখানাটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
১৯৯১ সালে কোম্পানির নাম বদলে করা হয় ‘GKW Limited’. ওই বছরই BIFR এ যায়। বিপুল সংখ্যক কর্মচারীকে লে অফ এ করে দেওয়া হয়। তারপরই লক আউট ঘোষিত হয়। ২০০৪ সালে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ডিলিস্টেড হয়ে যায়। বর্তমানে কোম্পানির শুধু জমিটুকু পড়ে আছে। ভিতরে কোনো বাজার গড়ে তোলার আয়োজন চলছে। কিন্তু কত বড় বাজার হবে? বিশ-পঁচিশটি বাজার একসাথে চললেও দুচারটি ফুটবল খেলার মাঠ পড়ে থাকবে।
ডানলপ বন্ধ হয়ে সাহা গঞ্জের যে অবস্থা হয়েছিল, শিবপুরে গেস্টকিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একই অবস্থা হয়েছে। বড়ো বড়ো স্টেশনারি দোকান, মিষ্টির দোকান, টেলারিং, সেলুন সব মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেসব বাড়ি বছর বছর রঙ হতো, এখন আর হয় না। গোটা জায়গাটিই বিবর্ণ হয়ে গেছে।