১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের প্রভাত ফেরির আনন্দ মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকে। এদিন সকালে সবংয়ের বলপাই পশুপতি সুরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ড্রাম সহযোগে প্রভাত ফেরির আয়োজন করা হয়েছিল। জাতীয় পতাকা হাতে, দেশাত্মবোধক স্লোগান ও সঙ্গীতের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রী (Student), শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্থানীয়রা সকলে মিলেই আনন্দের সঙ্গে পদযাত্রা করছিলেন। কিন্তু আচমকাই সেই আনন্দে হানা দিল ভয়ংকর ভীমরুলের দল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রভাত ফেরির মিছিল গ্রামাঞ্চলের রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছিল, তখনই রাস্তার ধারের একটি গাছে থাকা ভীমরুলের চাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত লাগে। সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক ভীমরুল ছুটে এসে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা চালায়। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় হুল ফোটানোর মারণ আক্রমণ।
এই ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৭ জনের অবস্থা গুরুতর। প্রত্যেকের শরীরে একাধিকবার হুল ফুটেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। গুরুতর আহতদের দ্রুত মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, বাকিদের সবং গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বহুজনই প্রাথমিকভাবে ভয় ও ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। হুলের জায়গায় ফুলে ওঠা, তীব্র ব্যথা, মাথা ঘোরা ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভীমরুলের হুলে বিষ থাকে যা অতিরিক্ত সংবেদনশীল ব্যক্তির জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা, রক্তচাপের পতন এবং হৃদ্যন্ত্র বিকল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এই ঘটনার পরে গ্রাম জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিভাবকেরা তড়িঘড়ি করে স্কুলে ছুটে আসেন সন্তানদের খোঁজখবর নিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই গাছে বহুদিন ধরেই ভীমরুলের চাক ছিল, তবে এত বড় আক্রমণ আগে কখনও দেখা যায়নি। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ভীমরুলের চাক অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এমন ঘটনা সত্যিই অভাবনীয়। স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের জন্য প্রভাত ফেরি একটি আনন্দঘন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আজ তা ভয়াবহতায় পরিণত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন নিয়েছে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে স্কুল ও জনসমাগম এলাকায় থাকা ভীমরুল বা মৌমাছির চাক অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তারদের মতে, এই মৌসুমে ভীমরুল সাধারণত বেশি আক্রমণাত্মক হয়, বিশেষ করে যদি তাদের চাক স্পর্শ বা নড়াচড়া করা হয়। তাই গ্রামীণ এলাকায় জনসমাগমের সময় এমন সম্ভাব্য ঝুঁকির জায়গা আগেভাগে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সব মিলিয়ে, স্বাধীনতা দিবসের সকালটি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকের জন্য এক অম্লমধুর স্মৃতি হয়ে রইল—একদিকে দেশপ্রেমের আবেগময় মুহূর্ত, অন্যদিকে হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভীমরুলের তাণ্ডবে আহত হয়ে পড়া নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের আতঙ্ক। এখন সকলের প্রার্থনা—আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক।