INC: বঙ্গে কংগ্রেসকে শূন্য করেছেন মমতা, পুরভোটে ছন্নছাড়া

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে এখন কোনওরকমে টিকে রয়েছে কংগ্রেস৷ ১৯৭২ সালের পর থেকে কমতে শুরু করেছিল জনপ্রিয়তা। তারপর যথাক্রমে বাম এবং তৃণমূল জমানা। আজও রাজ্যের রাশ…

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে এখন কোনওরকমে টিকে রয়েছে কংগ্রেস৷ ১৯৭২ সালের পর থেকে কমতে শুরু করেছিল জনপ্রিয়তা। তারপর যথাক্রমে বাম এবং তৃণমূল জমানা। আজও রাজ্যের রাশ ধরতে পারেনি কংগ্রেস (INC)। আসন্ন পুরভোটেও হাত শিবিরের মুষ্টি শক্ত হবে এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

জাতীয় রাজনীতিতেও রাজত্ব খুইয়েছে কংগ্রেস। এ রাজ্যে হাত দুর্বল হয়েছিল আগেই। ভোটব্যাংকের লড়াইয়ে কোনওরকমে টিকিয়ে রেখেছে নিজেদের অস্তিত্ব। বামেদের সঙ্গে হয়েছিল সমঝোতা। ডাম-বাম মিলেছিল এই বঙ্গে। আশা জাগিয়েছিল শিলিগুড়ি মডেল। আত্মবিশ্বাস জোগাড় করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিল জোট। ২ মে’র পরিসংখ্যান ভুলতে চাইবেন দুই দলেরই সমর্থক। কলকাতা পুরনির্বাচনে তৃণমূলের রমরমা। নির্বাচনে জয়ী কংগ্রেসের ২ প্রার্থী। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হলেন ওয়াসিম আনসারি। কলকাতা পুর-এলাকার অন্তর্গত ১৭ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে চারটি আসনে তৃণমূলের পর দ্বিতীয় স্থানে কংগ্রেস- বেলেঘাটা, চৌরঙ্গি, বালিগঞ্জ এবং মেটিয়াবুরুজে। বিধানসভা নির্বাচনে এই চার আসনেই দ্বিতীয় হয়েছিল বিজেপি। অর্থাৎ বিকল্প শক্তির সন্ধানে রয়েছেন আম-জনতার একাংশ। কিন্তু মোটের তুলনায় সেই শতকরা খুবই কম।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের জমানা। মাঝে কিছুকাল অটল বিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি। তারপর ফের কংগ্রেস৷ পতন ২০১৪ সালে। এ রাজ্যে পতন ১৯৭২-এ। নামের পাশে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। নেতৃত্বের অভাব হয়েছে প্রকট। কংগ্রেস কি কেবল গান্ধী পরিবারের? এ প্রশ্নও উঠেছে একাধিকবার। যদিও ইন্দিরা গান্ধীর সময়কার মতো আর প্রকাশ্য দ্বিখণ্ডিত হয়নি পার্টি। কিন্তু দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন এই প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।

সোনিয়া গান্ধী এখনও সভাপতি। রাহুল গান্ধী চেষ্টা করছেন নিজের মতো। কিন্তু মানুষ তাঁর ইমেজের ওপর নির্ভর করতে পারছেন কতটা? কোন দল ক্ষমতায় থাকবে তার অনেকটা নির্ভর করে সেই দলের কান্ডারীর ওপর। যেমন বিজেপির নরেন্দ্র মোদী, তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের সেই মুখ কোথায়?

কেন্দ্র থেকে গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকে রাজ্যে আরও দুর্বল হয়েছে হাত শিবির। অধীর রঞ্জন চৌধুরী রয়েছেন বটে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে তাঁর সিদ্ধান্ত বা বক্তব্যের বিরুদ্ধেই আওয়াজ উঠেছে একাধিকবার। যে হাইকম্যান্ড হাতড়ে বেড়াচ্ছে একজন নেতাকে, সেই তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার জন্য। যে দলের ভিতরেই স্থিরতা নেই মানুষ তাদের নির্বাচিত কেনই-বা করবেন?

আসন্ন পুরভোটগুলোতে হয়তো জোটের পথে যাবে না কংগ্রেস। জোট নেই শিলিগুড়ি পুরসভাতেও। আসানসোল, চন্দননগরে বামেদের সঙ্গ না দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আসানসোলে গত পুরভোটেও জোট ছাড়াই ১০৬ টি ওয়ার্ডে লড়াই করে বাম ও কংগ্রেস। ৩ টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস।

পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, মানুষের মন থেকে এখনও মুছে যায়নি কংগ্রেস। অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু জনসমর্থনকে একজোট করবেন কে? সংগঠকরাই যে ছন্নছাড়া!