কলকাতায় বেআইনি বাড়ি নির্মাণে পুরসভার অফিসারকে হাইকোর্টের কড়া হুঁশিয়ারি

কলকাতায় বারবার বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। এবার এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (High Court) প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন কলকাতা পুরসভার একজন…

high-court-issues-strict-warning-to-kolkata-municipal-officer

কলকাতায় বারবার বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। এবার এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (High Court) প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন কলকাতা পুরসভার একজন এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেছেন, এই ইঞ্জিনিয়ার বেআইনি বাড়ি নির্মাণে অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে অফিস থেকে সরাসরি জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ওয়াটগঞ্জে একটি বেআইনি বাড়ি নির্মাণ ভাঙার দাবিতে দায়ের মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেন তিনি। আদালত (High Court) নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১৬ মে-এর মধ্যে ওই বাড়ি নির্মাণের বেআইনি অংশ খালি করে ভেঙে ফেলতে হবে।

   

মামলার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আপনি অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। হলফনামা দিয়ে আদালতকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন? নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবেন? কোথাও বেআইনি বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠলে সেখানে সশরীরে আপনার যাওয়ার কথা। যাননি কেন? বেনিয়মের অভিযোগ উঠলে কিছু পদক্ষেপ তো করুন। যাতে অন্যরা ভয় পায়।” এই কথাগুলির মাধ্যমে তিনি পুরসভার এই কর্মকর্তার উদাসীনতা ও সন্দেহজনক আচরণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

এরপরই তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এন এন ব্যানার্জি রোডের অফিস থেকে সোজা জেলে পাঠিয়ে দেব। আপনার অবসরের আর কিছুদিন মাত্র বাকি। তার আগেই চাকরি চলে যাবে, তখন ভালো লাগবে?” এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে, প্রধান বিচারপতি বেআইনি বাড়ি নির্মাণে জড়িত থাকার অভিযোগে কঠোর শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। আদালতের নির্দেশে ওই বেআইনি বাড়ির তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তল ১৬ মে-এর মধ্যে ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছে। যদি বাসিন্দারা বাড়ি খালি করতে না চান, তবে পুলিশ কমিশনারকে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে জোর করে খালি করাতে হবে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “বাড়ির দুটো-একটা ইঁট খুলে এনে বললে যে বাড়ি ভেঙেছি, তা চলবে না। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করে আদালতে জমা দিতে হবে।” এই নির্দেশের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন যে, আদালতের (High Court) আদেশ পুরোপুরি পালিত হচ্ছে এবং তার স্বচ্ছ প্রমাণ থাকবে। এই কড়া অবস্থান কলকাতায় বেআইনি বাড়ি নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কলকাতায় বেশ কয়েকটি বাড়ি হঠাৎ হেলে পড়ে বা ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, যা শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাগুলির পিছনে প্রায়ই বেআইনি বাড়ি নির্মাণ এবং নির্মাণের নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠে আসে। ওয়াটগঞ্জের এই মামলাটি তারই একটি উদাহরণ। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি শুধু নির্মাতাদের নয়, পুরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরও এই সমস্যার জন্য সমানভাবে দায়ী মনে করছেন।

ইঞ্জিনিয়ারের প্রতি তিনি বলেন, “আপনার দায়িত্ব ছিল বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করা। কিন্তু আপনি তা করেননি। এটা কি আপনার অক্ষমতা, না ইচ্ছাকৃত সহযোগিতা?” তিনি আরও জানান, এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলে সাধারণ মানুষের মনে আইনের প্রতি ভরসা কমে যায়। তাই, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের উপর এর আগেও বেআইনি বাড়ি নির্মাণ নিয়ে বহু অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পুরসভার কর্মকর্তারা বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনা যাচাই না করেই অনুমোদন দিয়েছেন বা অভিযোগ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রধান বিচারপতির এই কড়া মন্তব্য এবং নির্দেশ পুরসভার কর্মকর্তাদের জন্য একটি জোরালো সতর্কবার্তা।

এই ঘটনা কলকাতার নগর পরিকাঠামোর দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। বেআইনি বাড়ি নির্মাণ শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, এটি শহরবাসীর জীবনের জন্যও বিপদ। প্রধান বিচারপতি যে কঠোরতা দেখিয়েছেন, তা অন্যান্য সরকারি দপ্তর ও কর্মকর্তাদের জন্যও উদাহরণ হতে পারে। আগামী ১৬ মে-এর মধ্যে এই নির্দেশ পালিত না হলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেদিকে সবার নজর রয়েছে।

এই মামলা শুধু একটি বাড়ি ভাঙার বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি কলকাতার বাড়ি নির্মাণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। পুরসভার কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা এবং স্বচ্ছতার প্রশ্নও এখানে উঠে এসেছে। আদালতের (High Court) এই কড়া অবস্থান কতটা কার্যকর হয় এবং কলকাতার নির্মাণ ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনে, তা সময়ই বলবে।