প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ফুলচাষ, দুর্গাপুজোয় ফুলের দামে অগ্নিঝড় আশঙ্কা

দুর্গাপূজা শুরু হতে আর মাত্র এক মাস বাকি। কিন্তু টানা বৃষ্টির ফলে পশ্চিমবঙ্গের ফুলচাষিদের (Flower Crops) মাথায় হাত। হাওড়া জেলার বাগনান এক ও বাগনান দুই…

West Bengal Marigold Boom: High Demand Fuels Horticulture Growth in Post-Pandemic Market

দুর্গাপূজা শুরু হতে আর মাত্র এক মাস বাকি। কিন্তু টানা বৃষ্টির ফলে পশ্চিমবঙ্গের ফুলচাষিদের (Flower Crops) মাথায় হাত। হাওড়া জেলার বাগনান এক ও বাগনান দুই ব্লকের ফুলচাষ অঞ্চলগুলিতে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে জমিতে জল জমে ফুল গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত গাঁদা, দোপাটি, গোলাপ, অপরাজিতা, জুঁই এবং বেলফুলের মতো মরশুমি ফুলগুলির ফলন কমে গিয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে দুর্গোৎসবের বাজারে, এমনটাই মনে করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

হাওড়ার বাগনান ব্লকের ওড়ফুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঘুনাথ জানা জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের এলাকা জেলার সীমানা অঞ্চলে এবং রূপনারায়ণ নদীর পাড়ে। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও রূপনারায়ণের বাড়তি জল ফুলচাষের জমিতে ঢুকে পড়েছে। মরশুমি ফুলের চাষে বড়সড় ক্ষতি হয়েছে। জবার গাছ তুলনামূলকভাবে টিকে গেলেও জমিতে জল জমায় ফুলের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।’’

   

বাগনান দুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রিয়জিৎ নন্দী বলেন, ‘‘বাঁটুল, বৈদ্যনাথপুর, বীরকুল-সহ আশপাশের বহু গ্রামে ফুলচাষ ও নার্সারি ব্যবসার উপর জীবিকা নির্ভর। অতিবৃষ্টির জেরে জমি ডুবে গিয়েছে, গাছ মরে যাচ্ছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।’’ তিনি জানান, উদ্যানপালন দপ্তরকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ে নতুন করে ফুল চাষ করা সম্ভব নয়, ফলে পুজোর বাজারে ফুলের সরবরাহ ঘাটতি হবে বলেই তাঁদের অনুমান।

ফুল ব্যবসায়ী পুলক ধাড়া বলেন, ‘‘এই সময়ে দোপাটি, গাঁদা, গোলাপের মতো ফুলের চাষ হয়। টানা বৃষ্টিতে জমিতে জল দাঁড়িয়ে দোপাটি গাছ মারা যাচ্ছে। যেসব গাছ বেঁচে আছে, তার ফুল ঝরে পড়ছে। আগে যেখানে প্রতি কেজি দোপাটি ফুল ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৫০ টাকায়।’’

এদিকে, স্থানীয় নার্সারি মালিক বিশ্বনাথ হাজরা, গণেশ মণ্ডল এবং বিমল মান্নারাও জানান, ‘‘নার্সারিগুলি কার্যত জলের তলায়। অল্প সময়ের মধ্যে এই ক্ষতি সামাল দেওয়া অসম্ভব।’’

Advertisements

সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেছেন, ‘‘টানা দুই মাস ধরে অতিবৃষ্টি চলছে। গাঁদা, দোপাটি, বাহারি পাতার গাছের মাটি সবসময় স্যাঁতসেঁতে থাকার ফলে অর্ধেকেরও বেশি গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাপড়িযুক্ত ফুলের ভেতরে বৃষ্টির জল ঢুকে ফুল পচে গেছে। সব মিলিয়ে এই দুর্গাপুজোয় ফুলের দাম আকাশছোঁয়া হবে, সঙ্কট অনিবার্য।’’

রাজ্যের অন্যতম প্রধান ফুল উৎপাদন কেন্দ্র বাগনান অঞ্চলে এই ক্ষতির প্রভাব রাজ্যজুড়েই দেখা দিতে পারে। দুর্গোৎসবের সময় কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ফুলের চাহিদা থাকে। কিন্তু এবার সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা দামের ব্যাপক বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করছেন। ফুলচাষিদের আশা, রাজ্য সরকার দ্রুত সাহায্যের ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

সব মিলিয়ে অতিবৃষ্টির জেরে চাষিদের এক বছরের পরিশ্রম মাঠে মারা গেছে। দুর্যোগ কাটিয়ে নতুন করে ফুল চাষ শুরু করা এখন তাঁদের কাছে বিশাল চ্যালেঞ্জ। পুজোয় ফুলের বাজারে আগুন লাগা প্রায় নিশ্চিত, এমনটাই বলছেন অভিজ্ঞ চাষিরা।