দিল্লির দরবারে রাজ্যের শ্রমিক ইস্যু, রিপোর্ট পাঠালেন রাজ্যপাল

ভিন রাজ্যে রুজি-রোজগারের (Migrant Worker) সন্ধানে বেরিয়ে পড়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা(Migrant Worker) ফের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। দীর্ঘদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গকে সামনে এনে…

Governor Submits 8-Page Report to Centre with Key Recommendations on Migrant Workers

ভিন রাজ্যে রুজি-রোজগারের (Migrant Worker) সন্ধানে বেরিয়ে পড়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা(Migrant Worker) ফের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। দীর্ঘদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গকে সামনে এনে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শ্রমিকদের অসুবিধার কথা তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি তিনি ফের সুর চড়িয়ে বলেন, “বাংলার মানুষকে বাইরে গিয়ে অপমানিত হতে হয়, অত্যাচারিত হতে হয়। আমরা তাদের পাশে আছি, থাকব।” তাঁর এই অবস্থান ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে বিষয়টি যে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে, তা মেনে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

এবার এই ইস্যুতেই কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সূত্রের খবর, রাজ্যপালের রিপোর্টে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা, তাঁদের সমস্যা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং ভিন রাজ্যে অবস্থানকালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা দিক উঠে এসেছে। সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা দেশের অন্য প্রান্তে গিয়ে কাজ করার সময় কোনও বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার না হন।

   

শ্রমশ্রী প্রকল্প ও রাজনৈতিক বার্তা

রাজ্যের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Worker) জন্য “শ্রমশ্রী” নামে বিশেষ প্রকল্প চালুর ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভিন রাজ্যে থাকা শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তাঁদের জন্য স্বাস্থ্য, বীমা, আর্থিক সহায়তা ও প্রয়োজনে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া বাংলায় ফিরে এলে তাঁদের স্বনির্ভর করার জন্য বিশেষ কর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ মূলত শ্রমিকদের আবেগকে কেন্দ্র করে। কারণ, শুধু গ্রামীণ এলাকা নয়, কলকাতা ও শহরাঞ্চলের বহু পরিবারও পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Worker) উপর নির্ভরশীল। পরিবারে রোজগেরে সদস্য ভিন রাজ্যে কাজ করেন বলেই সংসার চলে। ফলে এই শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে সরকার সরাসরি পদক্ষেপ করছে, এই বার্তা দেওয়াটা আগামী ভোটে শাসকদলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

রাজ্যপালের পদক্ষেপে নতুন বিতর্ক

তবে রাজ্যপালের রিপোর্ট নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছে। সাধারণত রাজ্যপালের ভূমিকা সংবিধানগত সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যের নানা বিষয়ে কেন্দ্রকে সরাসরি রিপোর্ট পাঠিয়ে আলোচনায় এসেছেন সিভি আনন্দ বোস। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে রাজ্যপালের এই রিপোর্ট মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার চাপ তৈরি করবে। আবার অন্য একটি অংশের দাবি, রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্কের টানাপোড়েনে এই পদক্ষেপ নতুন সংঘাত তৈরি করতে পারে।

Advertisements

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য মমতার অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, ভিন রাজ্যে বাংলার শ্রমিকরা যে সমস্যার মুখে পড়েন, তা মূলত রাজ্যের অদক্ষ প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান পরিকল্পনার ব্যর্থতার ফল। বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, “রাজ্যের উচিত স্থানীয় স্তরে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করা। তাহলে বাংলার মানুষকে বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে না।”

অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিক ইস্যুতে রাজনীতি করছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের ভিতরে শিল্প তৈরি না করে মুখ্যমন্ত্রী কেবল ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের দুর্দশার কথা বলে ভোটে সুবিধা নিতে চাইছেন।

নির্বাচনমুখী কৌশল

সব মিলিয়ে, রাজ্য ও কেন্দ্রের দ্বন্দ্বের মাঝেই পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু ক্রমশ নির্বাচনী রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলার বড় একটি অংশের জীবিকা নির্ভর করে এই শ্রমিকদের উপর। তাঁদের সমস্যাকে ঘিরে আবেগ তৈরি করা সহজ। ফলে একদিকে মুখ্যমন্ত্রী যেখানে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন, অন্যদিকে রাজ্যপালের রিপোর্ট বিষয়টিকে আরও আলোচনার কেন্দ্রে এনে দিল।

রাজনীতির ময়দানে এই লড়াই কতদূর গড়ায়, তা সময় বলবে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট—পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু আসন্ন বিধানসভা ভোটে অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে।