রবিবারেও পরীক্ষা স্কুলে, সহমত অভিভাবকরাও

ঘাটাল: দীর্ঘ ৫৬ দিন জলমগ্ন থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু সেই দীর্ঘ জলাবদ্ধতার জেরেই শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিপুল…

রবিবারেও পরীক্ষা স্কুলে, সহমত অভিভাবকরাও

ঘাটাল: দীর্ঘ ৫৬ দিন জলমগ্ন থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু সেই দীর্ঘ জলাবদ্ধতার জেরেই শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর। প্রায় আড়াই মাস ধরে স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় যথেষ্ট পিছিয়ে পড়েছে ঘাটালের পড়ুয়ারা। সেই ক্ষতি কিছুটা পূরণ করতেই ছুটির দিনেও পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের যোগদা সৎসঙ্গ শ্রীযুক্তেশ্বর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ (West Midnapore School)।

শনিবার ছিল জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি স্কুলে পরীক্ষা। রবিবার যেটা সাপ্তাহিক ছুটি, সেদিনও ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের এই উপস্থিতি দেখে অনেকেই অবাক হলেও, অভিভাবকরা এই সিদ্ধান্তে সহমত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, “যদি এখনই পরীক্ষা শুরু না হয় তবে আগামীতে আরও বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। ঘাটালে ফের বন্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এখনকার ছুটির দিনগুলোকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার চাপ কিছুটা হালকা করা প্রয়োজন।”

   

প্রধান শিক্ষকও এদিন জানান, “আমরা নিরুপায়। এতদিন স্কুল জলের নিচে থাকায় শুধু পরীক্ষা নয়, পঠন-পাঠন শুরু করাও সম্ভব হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই আমরা ছুটির দিনগুলো ব্যবহার করছি।”

এই পরিস্থিতি কতটা কঠিন ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। ঘাটাল পুর এলাকা থেকে শুরু করে একাধিক গ্রামপঞ্চায়েতের নিচু এলাকা এখনও হাঁটু সমান জলের নিচে। বন্যার জল কিছুটা কমলেও বহু পড়ুয়া ও অভিভাবককে জল পেরিয়েই স্কুলে পৌঁছতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে পেরে খুশি ছাত্রছাত্রীরা। যদিও কারও কারও মন খারাপ হয়েছে ছুটির দিনে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে বলে, তবু অধিকাংশই স্বীকার করছে যে শিক্ষা হারিয়ে গেলে ভবিষ্যতের ক্ষতি হবে আরও গভীর।

শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে ক্লাসের সিলেবাস অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। ফলে শিক্ষাবর্ষের বাকি সময়কে সর্বাধিক ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। পরীক্ষাগুলি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

Advertisements

অন্যদিকে, অভিভাবকরাও বুঝতে পারছেন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে শিক্ষার ধারাবাহিকতা অটুট রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রায় তিন মাস ধরে বই খুলে পড়াশোনা করতে পারেনি। এবার যদি দ্রুত পরীক্ষা না হয়, তাহলে পুরো বছরের পড়াশোনাই নষ্ট হয়ে যাবে।”

ফলে সরকারি ছুটি কিংবা রবিবারের মতো দিনগুলোকে এভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা। ঘাটালের বাসিন্দারা বলছেন, “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের জন্য উপকারী। যদি ফের বন্যা আসে, তখন অন্তত এই পরীক্ষাগুলি পিছিয়ে যাবে না।”

সব মিলিয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে চালু রাখতে এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঘাটালের যোগদা সৎসঙ্গ শ্রীযুক্তেশ্বর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল যে কঠিন পরিস্থিতিতেও পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে, তা একদিকে যেমন অভিভাবকদের আশ্বস্ত করছে, অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদেরও পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলছে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হোক—এই প্রত্যাশাই এখন সকলের।