একাধিক জেলায় প্লাবন হুঁশিয়ারি, নবান্নের সতর্কবার্তা দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আগামী কয়েকদিন সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হতে পারে। একটানা প্রবল বর্ষণের (Flood Alert) জেরে ইতিমধ্যেই বীরভূম, পুরুলিয়া…

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আগামী কয়েকদিন সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হতে পারে। একটানা প্রবল বর্ষণের (Flood Alert) জেরে ইতিমধ্যেই বীরভূম, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক অঞ্চলে জল জমে গেছে। পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে নবান্ন। তাই দক্ষিণবঙ্গের অন্তত তিনটি জেলার জেলাশাসকদের বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

Advertisements

গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে পুরুলিয়ার পরগা এলাকায়। সেখানে একদিনেই ৩১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বীরভূম জেলার নানুরে ২০৭ মিলিমিটার এবং কিন্নাহারে ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে নিচু অঞ্চলগুলোতে জল জমে গেছে এবং ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

   

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার বিভিন্ন অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনাতেও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, লাগাতার বর্ষণের কারণে দামোদর, অজয় ও ময়ূরাক্ষী নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। নদীগুলির জল যদি বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলে, তবে গ্রামীণ এলাকার বহু অংশ প্লাবিত হয়ে পড়তে পারে। শুধু নিচু এলাকা নয়, এমনকি উঁচু এলাকাও প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। তাই সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে।

এদিকে, প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশেও অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডেরও একাধিক জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে আন্তঃরাজ্য নদী ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলির জলস্তর দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে।

নবান্নের তরফে বীরভূম, বাঁকুড়া এবং হুগলির জেলাশাসকদের বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। নদী বাঁধ ও সেচ দফতরের অবকাঠামো যাতে অক্ষত থাকে, সেই ব্যাপারেও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় প্লাবন পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, সাধারণ মানুষকে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিচু অঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে প্রয়োজনে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বহু জেলায় স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র অস্থায়ী ত্রাণশিবির হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা এখন প্রবল প্লাবন সংকটের মুখোমুখি। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস যদি সত্যি হয়, তবে আগামী কয়েকদিনে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে আরও বেশি বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। তাই আগে থেকেই সতর্কতার ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর রাজ্য প্রশাসন।