বাংলায় আসছে SIR! আপনার নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে আছে? খুঁজবেন কী ভাবে?

Missing Voter! An Entire Booth Disappears

Advertisements

কলকাতা: আজ বিকেল সাড়ে চারটের পরেই হয়তো বদলে যেতে পারে রাজ্যের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত চিত্র। সূত্রের খবর, বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটে সাংবাদিক সম্মেলনে বড়সড় ঘোষণা করতে চলেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। আলোচ্য বিষয়- Special Intensive Revision (SIR), অর্থাৎ ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া। কমিশনের তরফে জোরালো ইঙ্গিত, পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্তত ১০টি রাজ্যে আজই আনুষ্ঠানিকভাবে এই SIR ঘোষণা হতে পারে।

   

ভোটার তালিকা বিশুদ্ধ করাই প্রধান লক্ষ্য

নির্বাচন কমিশনের দাবি, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল ভোটার তালিকাকে “বিশুদ্ধ ও নির্ভুল” করা—অর্থাৎ যেখানে ভুয়ো নাম রয়েছে, সেগুলি বাদ দেওয়া এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকাভুক্ত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়ে একাধিক বিতর্ক ও অভিযোগ ওঠায় কমিশন এবার চাইছে আরও কঠোর ও যাচাইকৃত ব্যবস্থা চালু করতে।

এই প্রেক্ষিতে কমিশন ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, বিহারের ধাঁচে বাংলাতেও ভোটার তালিকায় নাম রাখার জন্য নির্দিষ্ট ১১টি নথি চাওয়া হতে পারে। তবে কমিশন সূত্রে খবর, যাঁদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আগে থেকেই রয়েছে, তাঁদের নতুন করে কোনও ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে বহু পুরনো ভোটার প্রশাসনিক জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম কীভাবে খুঁজবেন Election Commission Voter List Revision

এই গুরুত্বপূর্ণ যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় নিজের নাম রয়েছে কি না তা খুঁজে দেখতে পারবেন খুব সহজেই।

১. গুগলে গিয়ে সার্চ করুন- 2002 West Bengal Voter List।
২. সার্চ রেজাল্টে প্রথমেই দেখতে পাবেন সাইট: ceowestbengal.nic.in/Roll_dist।
৩. এই সাইটে ক্লিক করলেই খুলে যাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার তালিকা।
৪. প্রথমে নিজের জেলা নির্বাচন করুন।
৫. এরপর প্রদর্শিত হবে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলির নাম।
৬. সেই তালিকা থেকে নিজের বুথ বা ভোটদান কেন্দ্র চিহ্নিত করুন।
৭. নির্বাচিত বুথে ক্লিক করলেই আপনার সামনে খুলে যাবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা।
৮. সেই তালিকা থেকে নিজের নাম খুঁজে দেখুন।

যদি নাম পাওয়া যায়, তাহলে আপনি পুরনো ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন, এবং কোনও অতিরিক্ত নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নাম না থাকলে লাগবে নিচের যে কোনও এক বা একাধিক নথি।

Advertisements

১১টি প্রয়োজনীয় নথি যা কমিশন চাইতে পারে

১. কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জারি করা পরিচয়পত্র।
২. অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে পেনশন পেমেন্ট অর্ডার।
৩. ০১.০৭.১৯৮৭-র আগের সরকার, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, এলআইসি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দেওয়া কোনও শংসাপত্র বা পরিচয়পত্র।
৪. জন্মের শংসাপত্র (Birth Certificate)।
৫. পাসপোর্ট।
৬. স্বীকৃত বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট বা শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র।
৭. রাজ্য সরকারের দেওয়া স্থায়ী বাসস্থানের শংসাপত্র।
৮. বনভূমি অধিকার শংসাপত্র।
৯. উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া তফসিলি জাতি, উপজাতি বা অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শংসাপত্র।
১০. জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-এর নথি।
১১. রাজ্য বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত জমি বা বাড়ির দলিল/শংসাপত্র।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব

নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ প্রশাসনিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই রাজনৈতিকভাবেও তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিগত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে-ভুয়ো নাম, দ্বৈত ভোটার, এমনকি মৃত ব্যক্তির নাম তালিকায় থাকার অভিযোগও বহুবার শোনা গেছে। এবার কমিশন স্পষ্ট করতে চাইছে, “ভোটার তালিকা হবে পরিচ্ছন্ন, নিখুঁত এবং বিশ্বাসযোগ্য।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে তা শুধু ভবিষ্যৎ নির্বাচনের মানোন্নয়নই নয়, বরং নির্বাচনী প্রশাসনে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার দিকেও এক বড় পদক্ষেপ হবে।

নজর আজকের ঘোষণায়

আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন কমিশনের শীর্ষ কর্তারা। সেখানেই স্পষ্ট হবে—কীভাবে, কোন সময়সীমার মধ্যে এবং কীভাবে SIR কার্যকর করা হবে। কমিশনের মতে, এটি এক সর্বভারতীয় মানদণ্ডে ভোটার তালিকা সংস্কারের সূচনা।

রাজনৈতিক মহল ইতিমধ্যেই কৌতূহলী। কারণ এই ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনী প্রস্তুতি, ভোটার পুনর্বিন্যাস এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

সুতরাং বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটের সেই সাংবাদিক বৈঠকেই নজর এখন গোটা রাজ্যের-ভোটার তালিকার ভবিষ্যৎ যে অনেকটাই নির্ভর করছে আজকের সেই সিদ্ধান্তের উপর, তা বলাই বাহুল্য।