ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া ঘিরে চলা বিতর্কের আবহেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠাল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দিল্লি সদর দফতর থেকে পাঠানো ওই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনের ঠিকানায় পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে।
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে বৈঠকের অনুরোধ এসেছিল। সে কারণেই দলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসতে কমিশন প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই বৈঠকের দিন ও সময়ও নির্ধারিত হয়েছে — শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর সকাল ১১টা। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে গিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের তালিকা আগাম জানাতে বলা হয়েছে তৃণমূলকে।
কমিশন জানিয়েছে, তারা সবসময় সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার পক্ষে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতেই তৃণমূলের অনুরোধ গ্রহণ করা হয়েছে।
চিঠির পর চিঠি — মুখ্যমন্ত্রী ও কমিশন
গত কয়েক দিনের মধ্যে পরপর দু’বার দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সর্বশেষ চিঠি পাঠানোর পরের দিনই কমিশনের চিঠি আসে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ও তড়িঘড়ি ভাবে কাজ চালানো হচ্ছে, যার জেরে বুথ লেভেল অফিসারদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনজন বিএলও-র মৃত্যু এবং আরও কয়েকজনের অসুস্থ হওয়ার ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন — এই প্রক্রিয়া হঠাৎ এভাবে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার পিছনে কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত আছে কি না।
সোমবার পাঠানো চিঠিতে আরও দুটি বিষয়ে আপত্তি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(১) সিইও দফতরের তরফে এক বছরের জন্য ১,০০০ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ৫০ সফটওয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের প্রস্তাব — যখন জেলার অফিসগুলিতে কর্মী আগেই নিযুক্ত রয়েছেন।
(২) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনকে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের প্রস্তাব — যার উদ্দেশ্য নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
এসআইআর নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান election commission sends letter to mamata banerjee
এসআইআর নিয়ে অসন্তোষ শুধু মুখ্যমন্ত্রীর নয়, তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছে —
একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই সংশোধন প্রক্রিয়া তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের সঙ্গে দেখা করার কথা উল্লেখ করেন। ১০ জন সাংসদকে কমিশনের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২০ দিনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে পাঠানো অভিযোগগুলির কোনও মীমাংসা না হওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তার পরের দিনই কমিশনের চিঠি এসে পৌঁছায়।
ভোটের আগে উত্তাপ বাড়ার ইঙ্গিত
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে,
ভোটের আগে নির্বাচনী নিরপেক্ষতা,
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া,
প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ
এমন সংবেদনশীল ইস্যুগুলিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় কমিশন ও রাজ্যের শাসকদলের সংঘাত আরও প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
