শমীকের আহ্বানে দিলীপের সাক্ষাৎ, বিজেপির অন্দরে নতুন সমীকরণ

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ গতিবিধি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। সম্প্রতি, বিজেপির নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের আহ্বানে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip) তাঁর সঙ্গে…

Dilip meets shamik

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ গতিবিধি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। সম্প্রতি, বিজেপির নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের আহ্বানে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip) তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন সল্টলেকের অফিসে। এই সাক্ষাৎ রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষের (Dilip) পরাজয় এবং দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব নিয়ে যে চর্চা শুরু হয়েছিল, তা এই সাক্ষাতের মাধ্যমে কিছুটা হলেও নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সায়েন্স সিটিতে শমীক ভট্টাচার্যের রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিয়োগের ঘোষণার সময় দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

   

সূত্রের খবর, দিলীপকে (Dilip)সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যদিও শমীক ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ফোন করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে, ৮ জুলাই দিলীপ ঘোষ শমীকের সঙ্গে দেখা করতে বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে পৌঁছান। দিলীপ বলেন, “শমীক বাবু সভাপতি হওয়ার সময় আমি বাইরে ছিলাম। তাই দেখা করতে পারিনি। আজ তাঁর সঙ্গে আলোচনার জন্য এসেছি।”

দিলীপ ঘোষ (Dilip) বিজেপির বাংলা ইউনিটকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে দল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন জিতেছিল। তবে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পরাজয় এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধির গুঞ্জন তাঁকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসে। শমীকের নিয়োগের পর দিলীপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তিনি নিজেই বলেছেন, “আমি কোনও কমিটিতে নেই। শুধু কোর কমিটিতে আছি। দু-চার মাসে যখন বৈঠক হয়, তখন ডাক পাই।”

শমীক ভট্টাচার্য তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘আদি-নব্য’ মেলবন্ধনের বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যাঁরা দলের কঠিন সময়ে পতাকা ধরেছিলেন, তাঁরা সম্মানের যোগ্য।” এই বক্তব্যে দিলীপ ঘোষের (Dilip) মতো পুরনো নেতাদের প্রতি সম্মান প্রকাশের ইঙ্গিত ছিল।

দিলীপও (Dilip)এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলার মানুষ পরিবর্তন চায়। আদি-নব্যদের নিয়ে একসঙ্গে চলতে হবে। সংসার বড় হলে সমস্যা হয়, তা মাথায় রেখে সমাধান করতে হবে।” এই বক্তব্যে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের প্রতি তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়।

এই সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। শমীক ভট্টাচার্য, যিনি দিলীপের সঙ্গে একসময় রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁর নেতৃত্বে দলের পুরনো ও নতুন নেতাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছেন। দিলীপের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠককে অনেকে দলের ঐক্য পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

Advertisements

তবে, দিলীপের (Dilip) সাম্প্রতিক কার্যকলাপ, যেমন দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি এবং ডুগডুগি বাজিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ, দলের অভ্যন্তরে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিলীপ ঘোষ (Dilip) দলের একজন প্রভাবশালী নেতা। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং গ্রাসরুট স্তরে জনসংযোগ বিজেপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শমীকের নেতৃত্বে দিলীপকে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও নজর রয়েছে।

হাওড়া ব্রিজে বিশ্বমানের আলোকসজ্জা ও ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো

সামাজিক মাধ্যমে (Dilip) এই সাক্ষাৎ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “শমীকের সঙ্গে দিলীপের সাক্ষাৎ দলের ঐক্যের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ।” তবে, কেউ কেউ মনে করেন, দিলীপের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয়।এই সাক্ষাৎ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিজেপির কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দল কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেকে শক্তিশালী করে, তা দেখার বিষয়। দিলীপ ঘোষের অভিজ্ঞতা এবং শমীকের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি একত্রিত হলে বিজেপি বাংলায় নতুন গতি পেতে পারে।