কলকাতা: রাজনীতির রূঢ় মঞ্চে যাঁকে সবাই চেনেন একরোখা, রুক্ষ, ‘দাবাং’ দিলীপ ঘোষ বলে—তাঁর চোখেও আজ খানিক প্রশান্তি। কারণ, শিবিরের ব্যস্ততা সরিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় তিনি হাতে তুলতে চলেছেন জীবনের নতুন অধ্যায়ের পাতা। বিয়ের তোড়া হাতে, পাশে রিঙ্কু মজুমদার—সাথী, সহকর্মী, এবং এবার থেকে জীবনসঙ্গী।
আলোর পথচলা: ইকো পার্কের সেই সকাল থেকে… (dilip ghosh wedding menu)
২০২১ সাল, ভোটের গরম হাওয়া বইছে বাংলায়। দিলীপ ঘোষ নিয়মমাফিক হাঁটছেন নিউ টাউনের ইকো পার্কে, তখনও জানতেন না এক ভোরের হাওয়া বদলে দেবে জীবনের মানচিত্র। সেখানেই রিঙ্কুর সঙ্গে প্রথম দেখা। তখনও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দূরেই থাকতেন রিঙ্কু। সময় এগোলো, কথাবার্তা বাড়ল। তারপর একদিন—হঠাৎ রিঙ্কুর সরাসরি প্রস্তাব। “তুমি তো আমার চেনা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য। আমি চাই তুমি আমার জীবনসঙ্গী হও।” আর দিলীপবাবু? তাঁর সেই বিখ্যাত হাসি—“ঠিক আছে।”
বিয়ে ছোট করে, মনের মতো করে dilip ghosh wedding menu
দিলীপ ঘোষ বরাবরই প্রথা ও আড়ম্বরের বাইরে। তাই বিয়েও হচ্ছে নিউ টাউনের নিজের বাসভবনে, একেবারে ঘরোয়া আয়োজনে। অতিথির সংখ্যা মাত্র ৩০। কিন্তু ভেতরের উত্তেজনা যে কোনো বড় মণ্ডপকেও হার মানায়।
সকাল থেকেই ভিড় জমেছে বিজেপির হেভিওয়েট নেতানেত্রীদের। সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, শমীক ভট্টাচার্য থেকে সুনীল বনশল—সবাই এসেছেন ফুল, উপহার, মিষ্টি নিয়ে। দিলীপবাবুও কাউকে ফিরিয়ে দেননি—উপহারে দিয়েছেন ধুতি-পাঞ্জাবি, শাড়ি।
পাতে কী থাকছে? dilip ghosh wedding menu
বিয়ে মানেই তো খাওয়া-দাওয়া! আর দিলীপবাবুর বিয়েতে মেনুও একদম বাঙালি ঘরানার—ভাত, ডাল, সবজি, কাতলার কালিয়া, রসগোল্লা, আইসক্রিম। অতিথি কম, তবে আদর যেন একচুলও কম নয়।
কে এই রিঙ্কু? dilip ghosh wedding menu
উত্তর কলকাতার মেয়ে রিঙ্কু মজুমদার, বিজেপির মহিলা মোর্চা ও ওবিসি সেলের দায়িত্ব সামলেছেন। এক বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলা, পঁচিশ বছরের এক ছেলের মা, যিনি আইটি সেক্টরে কাজ করেন। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন, কিন্তু মনের জায়গায় যে স্থিরতা ছিল, তা আজ পরিণয়ে রূপ নিচ্ছে।
মধুচন্দ্রিমা dilip ghosh wedding menu
নির্দিষ্ট জায়গা এখনও জানানো হয়নি, তবে রিঙ্কুর ইচ্ছা—“আইসোলেটেড, পাহাড়ি জায়গা হোক। দিলীপদার চারপাশে ভিড় লেগে থাকে, এবার একটু শান্তি চাই।”
পরের দিনই জন্মদিন! dilip ghosh wedding menu
২১ তারিখ বিয়ে, ২২ তারিখ দিলীপ ঘোষের জন্মদিন। প্রাতঃভ্রমণে ১৫০ জন অনুগামীকে খাওয়াবেন ইডলি-সাম্বার। বিকেলেই খড়গপুরের উদ্দেশে রওনা—সঙ্গী, নতুন জীবনসঙ্গিনী।
রাজনীতি একদিকে, হৃদয়ের গল্প অন্যদিকে dilip ghosh wedding menu
এই বিয়ে নিছক একজন নেতার ব্যক্তিগত পরিণয় নয়। রাজনৈতিক মতপার্থক্যের বাইরে সৌজন্য ও মানবিকতার বার্তা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন ফুল ও বার্তার মাধ্যমে। আর তাতেই প্রমাণিত—মানুষ আগে, রাজনীতি পরে।