হিন্দুদের আক্রমণ করে টেকা যাবে না, বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিলীপের

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার ক্রমাগত শিরোনামে উঠে আসছে। মন্দিরে আক্রমণ, বাড়ি ধ্বংস, এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে সরব হলেন বিজেপি…

Dilip Ghosh Warns Bangladesh

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার ক্রমাগত শিরোনামে উঠে আসছে। মন্দিরে আক্রমণ, বাড়ি ধ্বংস, এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে সরব হলেন বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। শুক্রবার গাইঘাটার এক দলীয় কর্মসূচিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা করেন তিনি। পাশাপাশি, ভারত ও সারা বিশ্বের হিন্দুদের এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান।

হিন্দুদের উপর আক্রমণের ফল ভয়াবহ হবে, দিলীপের হুঁশিয়ারি
গাইঘাটায় বিজেপির কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “পৃথিবীর কোনও দেশই হিন্দুদের উপর আক্রমণ করে টিকে থাকতে পারেনি।” তিনি আফগানিস্তান ও সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে বলেন, “যেসব দেশ হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে, তারা নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।” দিলীপের মতে, হিন্দুদের উপরে নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের দেশকে বড় বিপদে ফেলছে।

   

হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় দাঁড়িয়ে দিলীপ ঘোষ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি নিজের সমর্থনের বার্তা দেন। তিনি বলেন, “যদি বাংলাদেশের হিন্দু ভাই-বোনেরা ভারতে আসতে চান, তাহলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।” দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট করে দেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও কেন্দ্রের সরকার হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-এর প্রসঙ্গ
এদিন দিলীপ ঘোষ সিএএ-র প্রসঙ্গও তুলে আনেন। তিনি বলেন, “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হলেই বাংলাদেশ থেকে আসা সমস্ত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তাঁদের আর কোনও ভয়ের কারণ থাকবে না।” সিএএ আইন কার্যকর করা নিয়ে কিছুটা সময় লাগলেও বিজেপি যে এই বিষয়ে আন্তরিক, তা স্পষ্ট করে দেন দিলীপ।

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনা
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। পূজার মণ্ডপে আক্রমণ, মন্দির ভাঙচুর, বাড়ি ধ্বংস ও হত্যার মতো ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। দিলীপ ঘোষ এসব ঘটনার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার যদি এই পরিস্থিতি সামাল না দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে।”

পাকিস্তানের উদাহরণ টানলেন দিলীপ
বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ পাকিস্তানের উদাহরণও টেনে আনেন। তিনি বলেন, “যেভাবে পাকিস্তান সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করেছে, তার ফল তারা এখনও ভুগছে। আজ তাদের নিজস্ব দেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।” তাঁর মতে, বাংলাদেশের জন্যও একই ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে যদি তারা সময়মতো নিজেদের ভুল শুধরে না নেয়।

বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান
দিলীপ ঘোষ বাংলাদেশের প্রশাসনকে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ভারতের হিন্দুরা তাদের প্রতিবেশী দেশের হিন্দু ভাই-বোনদের রক্ষা করার জন্য যা কিছু করার দরকার হবে, তা করবে।” দিলীপের কথায়, এই বিষয়টি শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি ভারতের সংখ্যালঘু নীতির সঙ্গেও জড়িত।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই সুদৃঢ়। কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো বিষয়গুলি এই সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যদি তার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভারতও তাদের প্রতি কড়া অবস্থান নিতে বাধ্য হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
অনেকেই মনে করছেন, দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে হিন্দু ভোটারদের মন জয় করার জন্য এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, দিলীপ ঘোষ নিজে বলেন, “এটি কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি মানবতার বিষয়।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের চিন্তা
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে তা শুধুমাত্র সে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উপর নয়, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্কের উপর বড় প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ভারত, যেখানে হিন্দুদের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।

দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি সমর্থনের বার্তা পৌঁছেছে, তেমনই ভারতের প্রতিবেশী দেশের সরকারের উপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রশাসন যদি সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।