ঘন কুয়াশার জেরে দেরিতে হাওড়াগামী একাধিক দূরপাল্লা ট্রেন

শীতের মরশুম শুরুতেই বুধবার সকালে প্রথম কুয়াশায় (fog) ঢেকে যায় হাওড়া শহর ও শহরতলি। হাওড়া (Howrah) ব্রিজ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, ঋষি বঙ্কিম সেতু এবং শহরের…

short-samachar

শীতের মরশুম শুরুতেই বুধবার সকালে প্রথম কুয়াশায় (fog) ঢেকে যায় হাওড়া শহর ও শহরতলি। হাওড়া (Howrah) ব্রিজ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, ঋষি বঙ্কিম সেতু এবং শহরের প্রধান রাস্তাগুলির অধিকাংশ অংশে ঘন কুয়াশা দেখা যায়। কুয়াশার কারণে হাওড়া স্টেশনেও ট্রেন চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে, যা যাত্রীদের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কমে যায় এবং সঠিক সময়ে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়।

   

কুয়াশার প্রভাব শহরের রাস্তায়:
হাওড়ার বেশ কয়েকটি প্রধান রাস্তায়, যেমন জিটি রোড, আন্দুল রোড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, বেনারস রোড এবং হাওড়া-আমতা রোডে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা অনেক কমে যায়। যানবাহনের গতিও অনেকটা শ্লথ হয়ে যায়, যা কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে সকালবেলা যখন শহরে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য মানুষের ভিড় ছিল, তখন রাস্তায় গাড়ির গতির জন্য এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণত, এই রাস্তাগুলোতে প্রচুর যানবাহন চলাচল করে, কিন্তু কুয়াশার কারণে অনেক গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে থাকে, যার ফলে যানজট তীব্র হয়।

রেল চলাচলে বিলম্ব:
হাওড়া স্টেশনে ঘন কুয়াশার কারণে দূরপাল্লার (long-distance) ট্রেনের (trains) চলাচলে বেশ বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। যেসব ট্রেন উত্তর ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে থেকে হাওড়ায় ঢোকার কথা ছিল, সেগুলি নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেকটা দেরি করে ঢুকেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডাউন যোধপুর এক্সপ্রেস যেটি ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে হাওড়ায় ঢোকার কথা ছিল, সেটি ৬টা ৪০ মিনিটে পৌঁছায়। একইভাবে, ডাউন সরাইঘাট এক্সপ্রেস, যা ভোর সাড়ে পাঁচটায় হাওড়ায় ঢোকার কথা ছিল, সেটি সকাল সাতটায় পৌঁছায়।

এছাড়া, ডাউন জামালপুর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস, যেটি ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে হাওড়ায় পৌঁছানোর কথা ছিল, সেটিও সাতটা ৪০ মিনিটে পৌঁছায়। দিল্লি-হাওড়া ডাউন রাজেন্দ্রনগর এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও সময়সীমার মধ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটে। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ঢোকার কথা থাকলেও, সেটি সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পৌঁছায়। এমনকি, ডাউন চম্বল এক্সপ্রেসও নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেক দেরিতে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছায়।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, কুয়াশার কারণে লোকাল ট্রেন চলাচলে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে যাত্রীরা জানিয়েছেন যে, তাদের যাত্রার সময় বেশ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, অধিকাংশ লোকাল ট্রেন গড়ে আধ ঘণ্টা দেরিতে হাওড়ায় পৌঁছাচ্ছে। যাত্রীদের মতে, কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কমে যাওয়া এবং সিগন্যাল সঠিকভাবে দেখা না যাওয়া এই বিলম্বের কারণ।

কুয়াশার কারণে সতর্কতা:
রেল কর্মীদের একাংশ জানান, কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতির উপর প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে ট্রেন দেরিতে চলে। দৃশ্যমানতা কম হওয়ায় ট্রেন চালকরা বেশি সতর্কভাবে চলাচল করেন। রেল কর্তৃপক্ষ সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বন করে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ট্রেনের গতি কমানো হয়। তবে, বেলা বাড়লে কুয়াশা কিছুটা কমে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

যান চলাচলে গতি কমে যাওয়া:
শহরের ভোরের দিকে যান চলাচলের গতি অনেকটা কম ছিল। সাধারণত, ভোরে শহরে যানবাহনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে, কিন্তু কুয়াশার কারণে চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়। রাস্তায় চলাচল করা গাড়িগুলোর বেশিরভাগই খুব ধীরে চলছিল, যা দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কুয়াশা এতটাই ঘন ছিল যে, ড্রাইভারদের জন্য সঠিকভাবে রাস্তা দেখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

  • কুয়াশার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব:
    কুয়াশা কেবলমাত্র একদিনের সমস্যা নয়। শীতকালে কুয়াশার প্রকোপ সাধারণত কয়েকদিন বা আরও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। এর প্রভাব শুধু শহর বা স্টেশনে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং বৃহত্তর পরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষত ট্রেন এবং সড়ক পরিবহণের উপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। যখন ঘন কুয়াশা থাকে, তখন বেশিরভাগ রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়। এছাড়া, বিমান চলাচলেও কুয়াশার কারণে সমস্যা হতে পারে, যদিও সাধারণত বিমান চলাচল অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবিত হয়, কারণ বিমানগুলোর জন্য বিশেষ রাডার ব্যবস্থা থাকে।

হাওড়ায় শীতের কুয়াশার প্রভাবে এই সময়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচলে বড় ধরনের বিলম্ব দেখা যাচ্ছে। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে লোকাল ট্রেন চলাচলে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি, তবে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অধিকাংশ ট্রেনই কিছুটা দেরি করে চলাচল করছে। কুয়াশার কারণে রাস্তায় যান চলাচলের গতি ধীরে ধীরে পরিণত হয় এবং তা যাত্রীদের জন্য এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। এটি একটি সতর্ক সংকেত যে, শীতকালীন কুয়াশার কারণে সড়ক এবং রেল চলাচলে সমস্যা হতে পারে, এবং যাত্রীদের আরও সতর্ক হতে হবে।