Darjeeling: ধান কেনার দুর্নীতিতে ‘তৃণমূল জড়িত’ বলে ইডিকে চিঠি পাঠালেন গ্রামবাসীরা

গোটা বাংলা জুড়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দুর্নীতি, অসৎ কাজকর্ম নজরে আসছে। বছরখানেক আগে ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ধান বিক্রি বিষয়টি সামনে এসেছিল। তবে এই নিয়ে…

গোটা বাংলা জুড়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দুর্নীতি, অসৎ কাজকর্ম নজরে আসছে। বছরখানেক আগে ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ধান বিক্রি বিষয়টি সামনে এসেছিল। তবে এই নিয়ে পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করেনি বলে অভিযোগ। যার ফলে অভিযুক্ত নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনও খড়িবাড়ি, নকশালবাড়িতে সরকারি সহায়কমূল্যে কৃষকদের ধান কেনা নিয়ে দালালচক্র সক্রিয়। এই অভিযোগ তুলে ন্যায্য বিচারের দাবিতে ইডি’র দ্বারস্থ হলেন দার্জিলিং (Darjeeling) জেলার খড়িবাড়ি ব্লকের বুড়াগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিডোবার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ইডিকে চিঠি দিয়েছেন।

সম্প্রতি রেশন দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার। এরপরেই ধান কেনা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফের সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। অভিযোগকারীদের পক্ষের আইনজীবী তাপস সরকার জানিয়েছেন, ‘পুলিশ ভালো করে তদন্ত করলে একাধিক নেতা, মন্ত্রী গ্রেফতার হত। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি যারা করেছে তারা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ ঠিকমত চার্জশিট জমা না দেওয়ায় দোষীরা ছাড়া পেয়ে যায়। তাই গ্রামবাসীরা সঠিক বিচার না পেয়ে ইডি’র দ্বারস্থ হয়েছেন’।

বুড়াগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় আড়াইশো কৃষকের নামে ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দীর্ঘদিন ধরে ধান কেনাবেচা শুরু করেছিল দালালরা। শুধুমাত্র বুড়াগঞ্জ নয়, নকশালবাড়ি, হাতিঘিসা, মণিরাম, খড়িবাড়িজুড়ে দালালরা বাসিন্দাদের ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বসেছিল। নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি থানায় বাসিন্দারা এই বিষয় নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ ঠিকমত তদন্ত না করায় অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁদের নামে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, তাঁরা চাষ তো দূরে থাক, অনেকের জমিও নেই। কেউ কেউ কয়েক পুরুষ ধরে দিনমজুরি করেন। কেউ অন্য কাজ করেন। খড়িবাড়ি, নকশালবাড়ির বিভিন্ন গ্রামের ওই দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে সরকারি খাতায় চাষি বানিয়ে দিয়েছিল দালালরা।

দুর্গা বর্মন নামে এক অভিযোগকারী জানিয়েছেন, ৫০০ টাকার বিনিময়ে তাঁদের কাছ থেকে অ্যাকাউন্টের পাসবুক নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর দালালরা সরকারি সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির পর সেই টাকা ঢুকত ওই অ্যাকাউন্টে। মোবাইল ফোনে মেসেজ এলে তাঁরা জানতে পারতেন অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। পরমুহূর্তে তা তোলাও হয়ে যেত।

বছরের পর বছর ধরে এই কারবার চলছিল। খড়িবাড়ি ও নকশালবাড়ি থানায় প্রায় আড়াইশো কৃষক ভুয়ো অ্যাকাউন্টে অবৈধ লেনদেনের বিষয় নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। ঘটনায় বুড়াগঞ্জের বাসিন্দা মাধব সিংহ নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু অভিযোগ, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জামিন পান। ফলে পুলিশের তদন্ত নিয়ে বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। পরে এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত বিশেষ এগোয়নি।

ধান কেনা নিয়ে এলাকায় ফের দালালরাজ সক্রিয় হওয়ায় ও র‍্যাশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পর স্থানীয়রা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। তাই স্থানীয়রা এবার ধান কেলেঙ্কারি নিয়েও ইডি তদন্ত চাইছেন। এদিকে শিলিগুড়ি মহকুমার খাদ্য সরবরাহ আধিকারিক তারিক আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক বছর আগে কী হয়েছিল আমার জানা নেই। বর্তমানে ধান কেনা নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।’