ক্রমে শক্তি বাড়িয়ে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ (Cyclone Montha Update) । আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড় বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এটি এখন একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্মে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকায়, বিশেষ করে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর প্রভৃতি সমুদ্রসৈকতে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
দিঘার আকাশে সকাল থেকেই কালো মেঘের আনাগোনা। দুপুরের পর থেকেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি এবং সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। সমুদ্রের ঢেউ ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, যার কারণে পর্যটকদের সমুদ্রের ধার থেকে দূরে থাকতে প্রশাসন একাধিকবার মাইকিং করে সতর্ক করছে।
দিঘা শঙ্করপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পক্ষ থেকেও বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সৈকতের আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। হোটেল ও গেস্টহাউস মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন তাঁদের অতিথিদের নিরাপদে রাখেন এবং সমুদ্রের ধারে যাওয়ার অনুমতি না দেন।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঝড়ের গতি আরও বাড়তে পারে। দিঘা উপকূলে ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে, আর সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে অনুমান। এ কারণে জেলেদের ইতিমধ্যেই সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের নৌকাগুলি বন্দরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং উপকূলীয় গ্রামগুলিতে সতর্কতা জারি রয়েছে।
তবে, প্রকৃতির এই রুদ্র রূপের মধ্যেও দিঘায় বহু পর্যটক রয়েছেন। অনেকেই ছাতা মাথায় বৃষ্টি ও বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে উত্তাল সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করছেন। কেউ কেউ ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, আবার কেউ লাইভ করছেন সামাজিক মাধ্যমে। তবে, প্রশাসনের তরফে সাফ নির্দেশ — “জীবন ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রের ধারে নামা একেবারেই নিষিদ্ধ।”
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, যেকোনও জরুরি পরিস্থিতিতে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দিঘা এবং তার আশপাশে পর্যটকদের সুরক্ষায় একাধিক উদ্ধার দল মোতায়েন করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মন্থা স্থলভাগে প্রবেশের আগে আরও শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। যদিও দিঘায় সরাসরি আছড়ে পড়ার আশঙ্কা নেই, তবে এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চল — বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় — ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।


