কালীপুজোর আগেই ঘূর্ণিঝড় “ডানার” ঝাপটায় সম্ভবত লন্ডভন্ড হবে বাংলা

কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪: বাংলার উপকূল এলাকায় কালীপুজোর (Kali Puja) আগেই প্রকৃতির চরম আঘাত আসতে পারে। বঙ্গোপসাগরে (Bay of Bengal) একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার…

Cyclone 'Dana' Likely to Hit Bengal Before Kali Puja

কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪: বাংলার উপকূল এলাকায় কালীপুজোর (Kali Puja) আগেই প্রকৃতির চরম আঘাত আসতে পারে। বঙ্গোপসাগরে (Bay of Bengal) একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা ক্রমে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল। যদিও ভারতের আবহাওয়া দফতর এখনো নিশ্চিতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়নি, তবে ইউরোপ ও আমেরিকার আবহাওয়া মডেলগুলোর অনুমান অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় “ডানা” (Cyclone Dana) আছড়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবহাওয়া দফতরের আগাম সতর্কতা
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ২০ শে অক্টোবর রবিবার উত্তর আন্দামান সাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে। এই ঘূর্ণাবর্ত ২২ শে অক্টোবর মঙ্গলবার মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হবে। এরপর এটি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ পর্যন্ত আবহাওয়া দফতর ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি, তবে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

   

ইউরোপ ও আমেরিকার মডেলের পূর্বাভাস
ইউরোপ ও আমেরিকার আবহাওয়া মডেলগুলো অনুযায়ী, ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশা থেকে বাংলাদেশের বরিশাল উপকূলের মধ্যে যেকোনো স্থানে ল্যান্ডফল করতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।

ইউরোপিয়ান মডেলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি যদি ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে, তাহলে এর শক্তি অনেকটা বেশি হবে। তবে বাংলাদেশের উপকূলে ল্যান্ডফল করলে এর গতি কিছুটা কম থাকবে এবং ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে প্রবাহিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তার নামকরণ হবে “ডানা” যা কাতার দ্বারা দেওয়া হয়েছে।

মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কবার্তা
আবহাওয়া দপ্তর ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। আগামী ২২ এবং ২৩ শে অক্টোবর মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সেসময় সমুদ্রে ৫৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, যার ফলে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে। মৎস্যজীবীদের জীবন রক্ষার জন্য এই সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে প্রভাব
এই সিস্টেমের প্রভাবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে। ২২ শে অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল থেকে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ঝড়ো হওয়া শুরু হতে পারে এবং এর সঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে। ২৩ এবং ২৪ অক্টোবর দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৩ এবং ২৪ শে অক্টোবর দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রস্তুতি এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা
বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যেতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সমুদ্র উপকূলে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে ঝড় বা বন্যার ফলে কোনও বড় ক্ষতি না হয়।

পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলো মাথায় রেখে রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জরুরি সেবা চালু রাখতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা, পানীয় জল এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

পূর্ববর্তী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং আশঙ্কা
বাংলার উপকূলীয় জেলাগুলি আগেও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছে। “আম্পান” ও “ইয়াস” এর মতো ঘূর্ণিঝড় বাংলার উপকূল এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তাই নতুন করে আবার একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা মানুষকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে কালীপুজোর আগে এই ধরনের বিপদজনক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের আনন্দমুখর উৎসবমুখী মেজাজকে ভেঙে দিচ্ছে।

যদিও ভারতীয় আবহাওয়া দফতর এখনো নিশ্চিতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়নি, তবে ইউরোপ ও আমেরিকার মডেলগুলোর পূর্বাভাসকে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কালীপুজোর ঠিক আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই সম্ভাবনা সবাইকে সতর্ক করেছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি বা অবনতি হবে কিনা তা নির্ভর করছে সাগরে তৈরি হওয়া সাইক্লোজেনেসিসের ওপর।