বঙ্গ রাজনীতির নতুন ওষুধ, তৃণমূলকে ‘সেলিম দাওয়াই’ বাম প্রার্থী প্রতীকউরের

দমদম দাওয়াই নাকি সেলিম দাওয়াই? লোকসভা ভোটে বাংলাবাসী পেয়েছেন গরম রাজনীতির নতুন ওষুধের খোঁজ। দাওয়াই পেয়ে CPIM সমর্থকরা  উজ্জীবিত। কী এই ‘দাওয়াই’ যা বারবার আলোচিত…

দমদম দাওয়াই নাকি সেলিম দাওয়াই? লোকসভা ভোটে বাংলাবাসী পেয়েছেন গরম রাজনীতির নতুন ওষুধের খোঁজ। দাওয়াই পেয়ে CPIM সমর্থকরা  উজ্জীবিত। কী এই ‘দাওয়াই’ যা বারবার আলোচিত হয়।

বঙ্গ রাজনীতিতে অনেক পুরনো শব্দ ‘দমদম দাওয়াই’। ১৯৬৭-১৯৬৮ সালে তখন পশ্চিমবঙ্গে চলছিল এ রাজ্যে প্রথম অ-কংগ্রেসি যুক্তফ্রন্ট সরকার। বিরোধী আসনে কংগ্রেস। ধিকিধিকি করে নকশালবাড়ি সশস্ত্র কৃষক আন্দোলন জমাট হচ্ছিল। সেরকমই সময়ে দমদমে ঘটেছিল রেশনের মজুত চাল, কেরোসিনের কালোবাজারি রুখে দমদমবাসীর গণপ্রতিবাদ। লাঠি হাতে রেশন দ্রব্য জবরদস্তি নিজেদের দখলে এনে ন্যায্য মূল্যে বিতরণ করেন দমদমবাসী। এই ঘটনাটি ‘দমদম দাওয়াই’ বলে চর্চিত।

   

এই ঘটনার রেশ ধরে নির্বাচনী রাজনীতি বারবার গরম হয়েছে। ডান-বাম পক্ষের নেতৃত্ব নিজেদের কর্মী সমর্থকদের উত্তেজিত করতে দমদম দাওয়াই ভোকাল টনিক দেন। শেষ দফা ভোটের আগে দমদম দাওয়াই শব্দ বলে নিজেদের কর্মীদের উজ্জীবিত করেন হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। একইভাবে বাম নেতৃত্ব দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ‘দমদম দাওয়াই’ হবে বলেছেন।

তবে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে এবার দমদম দাওয়াইয়ের পাশে তীব্র চর্চিত ‘সেলিম দাওয়াই’। লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের রাফ-টাফ ইমেজে বাম শিবির উজ্জীবিত। কারণ, মাঠে নেমে সেলিমের ভোট করানোর ছবি আগেই মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে ভাইরাল হয়েছে। এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের দিন কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী সেলিম সরাসরি ভুয়ো এজেন্ট তথা তৃণমূল সমর্থককে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছিলেন। তাঁর সেই ভূমিকা রাজ্য ছাড়িয়ে দেশজুড়ে তীব্র আলোচিত হয়েছিল। এমনকী প্রতিবেশি বাংলাদেশেও ঘটনাটি ছিল সেদেশের সংবাদ শিরোনামে।

তৃ়ণমূল সমর্থকের ঘাড় ধরেছেন খোদ সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক। এমন দৃশ্য বাংলার রাজনীতিতে নজির হয়ে গেছে। কারণ, এ রাজ্যে ১৯৭৭-২০১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট সরকারের দাপটের সময় বারবার বাম সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষদের উপর চড়াও হওয়ার ভুরিভুরি নজির আছে। তবে তৎকালীন কোনও সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদককে রণংদেহী মেজাজে দেখা যায়নি। যেমনটা এবারের লোকসভা নির্বাচন সেলিম করে দেখিয়েছিলেন। এরপর থেকে বঙ্গ রাজনীতিতে ‘সেলিম দাওয়াই’ শব্দ শুরু হয়।

বাম সমর্খক মহলে ছড়ায় সেলিম দাওয়াই। জেলায় জেলায় বাম সমর্থকরা আগে থেকেই বলছিলেন, ক্ষমতা হারানোর পর নেতারা নরমপন্থা নিয়েছিলেন। তাই সমর্থন থাকলেও সেই সমর্থন ভোট কেন্দ্রে আনার সুযোগ মিলছিল না। মহম্মদ সেলিম সেই ভয় কাটিয়ে দিয়েছেন। এরপরই বাম মহলে শুরু হয় সেলিম দাওয়াই। দক্ষিণবঙ্গের সবকটি লোকসভা নির্বাচন পর্বে বাম প্রার্থীদের বারবার ভুয়ো ভোটার ও ভুয়ো এজেন্টদের তেড়ে গিয়ে ধরতে দেখা গেছে। 

নির্বাচন বিশ্লেষণে উঠে আসছে, লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় দক্ষিণ ২৪পরগনার  ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী প্রতীকউর রহমান ‘সেলিম দাওয়াই’ প্রয়োগ করে তৃণমূল সমর্থক ভুয়ো এজেন্টকে ধরেছেন। ডায়মণ্ডহারবার কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ও গতবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।