পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার ভাতার থানার অন্তর্গত কাশীপুর গ্রামে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। সিপিআইএমের নেতৃত্বে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়ে ১৪ একর খাস জমির দখল নেওয়া হয়েছে। রবিবার এই জমিতে লাল পতাকা পুঁতে সিপিআইএম তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। এক সময় বর্ধমান ছিল বামেদের অত্যন্ত শক্তিশালী ঘাঁটি। দীর্ঘদিন পরে এই ঘটনা সিপিআইএমের পক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Read Hindi: भातार में सीपीआईएम ने 14 एकड़ खास जमीन पर किया कब्जा
সিপিআইএমের সারা ভারত কৃষকসভার নেতৃত্বে স্থানীয় বেশ কিছু ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা মিছিল করে ওই জমিতে পৌঁছে দখল নিয়েছে। সিপিআইএমের দাবি, বাম আমলে এই ১৪ একর জমি শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে পাট্টা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছর ধরে কিছু স্থানীয় ব্যক্তি, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের সমর্থনে, এই জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। এমনকি, তারা অসৎ উপায়ে জমির রেকর্ডও পরিবর্তন করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এই জমির কিছু অংশ বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিক্রিও করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের নির্দেশে এই জমি আবার সরকারের খতিয়ানে ফিরে এসেছে। সিপিআইএম জানিয়েছে, এই জমি মূলত ভূমিহীন আদিবাসী পরিবারগুলোর জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছিল। তাই তারা আদিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে এই জমির দখল ফিরিয়ে নিয়েছে। সিপিআইএমের স্থানীয় নেতা অমিত মণ্ডল বলেন, “এই জমি ভূমিহীনদের অধিকার। আমরা কেবল তাদের ন্যায্য হক ফিরিয়ে দিয়েছি। শাসক দলের মদতে জমি দখলের এই প্রবণতা আমরা আর মেনে নেব না।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনা কেবল শুরু। ভূমিহীনদের অধিকার রক্ষায় তারা আরও আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
স্থানীয় আদিবাসী পরিবারগুলো এই ঘটনায় উৎফুল্ল। কাশীপুরের বাসিন্দা রামু মুর্মু বলেন, “এই জমি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে আমাদের ছিল। কিন্তু কিছু লোক জোর করে এটা দখল করে নিয়েছিল। আজ আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি।” তিনি সিপিআইএমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এই জমিতে তারা আবার চাষবাস শুরু করতে চান।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। তাদের দাবি, ওই জমি সরকারের খাস জমি এবং এটি এখনও সরকারের অধীনেই রয়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সুজিত ঘোষ বলেন, “সরকার নিয়মিতভাবে ভূমিহীনদের পাট্টা বিতরণ করছে। সিপিআইএম এখানে কোনও স্বার্থ ছাড়া এই ঘটনা ঘটাচ্ছে না। আসলে নির্বাচনের আগে তারা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, সিপিআইএম এই ধরনের ঘটনার মাধ্যমে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে।
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে। ভাতার থানার ওসি অজয় সেন বলেন, “আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।” তিনি আরও জানান, জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আদালতের নির্দেশ মেনে সমাধান করা হবে।
এই ঘটনা পূর্ব বর্ধমানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে সিপিআইএম তাদের পুরনো ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় আন্দোলন জোরদার করছে, অন্যদিকে তৃণমূল এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এখন এই বিরোধের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন।