দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের (CPIM) সম্মেলন শনিবার রাতে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, যখন নতুন জেলা কমিটি থেকে একাধিক তরুণ নেতাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ১৮ জন নেতানেত্রী তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এ ঘটনা সিপিএমের অভ্যন্তরে একটি নতুন সংকটের সূচনা করেছে, যা রাজ্য রাজনীতিতে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের এক নতুন পর্ব হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নতুন সিপিএম কমিটিতে কিছু তরুণ নেতাদের বাদ দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলের অভ্যন্তরের একাংশ। এই তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রাক্তন জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী (Mili Chakraborty) এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র সাম্য গঙ্গোপাধ্যায়। তাদের মতে, দলের নেতৃত্বে তরুণদের স্থান দেওয়া উচিত, কিন্তু নতুন কমিটি তাদের জন্য কোনো জায়গা রাখেনি।
এই ঘটনা সিপিএমের জন্য এক নতুন সংকট তৈরি করেছে। সাধারণত, সিপিএম এমন দলের মধ্যে পড়ে, যাদের মধ্যে প্রবীণ নেতাদের বিশাল প্রভাব রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলটির মধ্যে তরুণ নেতৃত্বের উত্থান এবং তাদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। তরুণ নেতারা চেয়েছিলেন, তাঁদের অধিক ভূমিকা দেওয়া হোক এবং নতুন কমিটিতে তাদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ থাকুক। কিন্তু সেই আশার বাতাস ফুরিয়ে গেছে।
সিপিএমের এই নতুন কমিটির ঘোষণার পর থেকেই প্রবীণ নেতারা তাদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে, সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতাদের উপস্থিতি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তরুণ নেতৃত্বের প্রতি কিছুটা অবজ্ঞা করা হলে তা দলের অভ্যন্তরে অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।
এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির একটি বৃহত্তর চিত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলমান। তৃণমূলের অভ্যন্তরেও একাধিকবার এই বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে, যেখানে প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে তরুণ নেতৃত্বের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা গেছে। তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের অভ্যন্তরে এই একই ধরণের দ্বন্দ্ব এখন মাথাচাড়া দিয়েছে। নতুন নেতৃত্বের উত্থান এবং প্রবীণ নেতাদের শক্তির দিক থেকে এটিকে এক নতুন দিক বলে মনে করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর, দলের মধ্যে অশান্তি ও বিভাজন নতুন মাত্রা পেয়েছে। সিপিএমের কাছে এ ধরনের পরিস্থিতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ দলের ঐক্য ও শক্তি বজায় রাখতে হলে এই বিরোধের দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। যদিও সিপিএম একটি দলের মধ্যে রয়েছে প্রবীণ নেতৃত্বের শক্তিশালী উপস্থিতি, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তরুণ নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।