দিঘায় (digha) নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি তুঙ্গে। আগামী ২৯ এপ্রিল মহাযজ্ঞের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান শুরু হবে, এবং ৩০ এপ্রিল (অক্ষয় তৃতীয়া) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দিরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ৩০ এপ্রিল প্রাণপ্রতিষ্ঠা (দেবমূর্তির পবিত্রীকরণ) অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন, যা পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ব্লকে জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য রাজ্যের সাধারণ মানুষকে এই পবিত্র অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।
মহাযজ্ঞ ও প্রাণপ্রতিষ্ঠার তাৎপর্য (digha)
মহাযজ্ঞ, যা ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে, মন্দির উদ্বোধনের আগে একটি পবিত্র আচার হিসেবে পালিত হয়। এই যজ্ঞ মন্দিরের (digha) পরিবেশকে আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র করবে এবং দেবতার আগমনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে। প্রাণপ্রতিষ্ঠা, যা ৩০ এপ্রিল পুরীর প্রধান পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে, হিন্দু ঐতিহ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আচার। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মূর্তিতে ঐশ্বরিক শক্তি সঞ্চারিত হয়, যা এটিকে পূজার জন্য উপযুক্ত করে। মন্দিরটি ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) দ্বারা পরিচালিত হবে।
জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে (digha) কৌশলগত স্থানে জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করা হচ্ছে, যাতে দিঘায় উপস্থিত না হয়েও মানুষ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেন। এই উদ্যোগ রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভক্তদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, যারা দিঘায় পৌঁছাতে অক্ষম। সূত্র জানায়, এই সম্প্রচার উচ্চমানের হবে, যাতে দর্শকরা প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রতিটি বিবরণ স্পষ্টভাবে দেখতে পান।
দিঘা জগন্নাথ মন্দির: একটি স্থাপত্যশৈলীর মাস্টারপিস
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিরূপ হিসেবে নির্মিত এই মন্দিরটি ২২ একর জমির উপর অবস্থিত এবং এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। মন্দিরটিতে অতিথিশালা, বিশ্রামাগার, প্রশাসনিক ভবন এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দিঘার (digha) মন্দিরে পুরীর মতো সব ধরনের সুবিধা থাকবে, এমনকি ভোগের জন্য আলাদা এলাকাও নির্মিত হয়েছে। পুরীতে যেখানে ‘খাজা’ প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়, সেখানে দিঘায় ‘গুজিয়া’ এবং ‘পেড়া’র মতো মিষ্টি প্রসাদ হিসেবে পরিবেশিত হবে।
কেকেআরের স্পিন জাদু রুখতে অবিক্রিত কোটিয়ান পাঞ্জাবে
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ
৩০ এপ্রিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১২,০০০-এর বেশি অতিথি এবং ২৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অংশ নেবেন। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলী এবং তার দল এই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন। মন্দিরটি উদ্বোধনের দিন দিঘা (digha) কার্যত একটি দুর্গে পরিণত হবে, কারণ নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, যারা দিঘায় আসতে চান, তারা ২৮ এপ্রিল বিকেল ৩টার মধ্যে পৌঁছে যান। ২৯ ও ৩০ এপ্রিল জরুরি পরিষেবা ছাড়া দিঘা গেটের বাইরে বাণিজ্যিক যানবাহনের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রশাসনিক প্রস্তুতি
মন্দিরের নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (হিডকো) এবং দিঘা (digha) শঙ্করপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। মন্দিরের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকার একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছে। শনিবার নবান্নায় মুখ্যসচিব মনোজ পান্ত পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট, ট্রান্সপোর্ট, পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং, সেচ ও জলপথ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৮ এপ্রিল থেকে দিঘায় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। একাধিক পোস্টে বলা হয়েছে, “হাজার বছর পর নির্মিত দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে মহাযজ্ঞ ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান বিশ্বের ভক্তদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।”
দিঘার জন্য নতুন মাইলফলক
দিঘা জগন্নাথ মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন সংযোজন। এই মন্দির ভারত এবং বিশ্বের জগন্নাথ ভক্তদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হয়ে উঠবে। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং পুরীর ঐতিহ্যের সঙ্গে সাদৃশ্য এটিকে একটি অনন্য আকর্ষণ করে তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় হিডকোর প্রকৌশলীদের প্রশংসা করে বলেছেন, এই প্রকল্প রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করবে।
দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের মহাযজ্ঞ ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। প্রতি ব্লকে জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সকলের কাছে পৌঁছে দেবে। পুরীর প্রধান পুরোহিতের নেতৃত্বে প্রাণপ্রতিষ্ঠা এবং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মন্দির উদ্বোধন দিঘাকে একটি নতুন আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।