কলকাতা হাইকোর্টকে (high court) “সন্দেহজনক বা স্বল্প মেয়াদের বিচারপতিদের ডাম্পিং গ্রাউন্ড” হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলে ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার কাছে একটি চিঠিতে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তিনটি আইনজীবী সংগঠন। তারা দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি দিনেশ কুমার শর্মাকে কলকাতা হাইকোর্টে স্থানান্তরের জন্য কলেজিয়ামের সুপারিশ পুনর্বিবেচনা ও প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
এই চিঠি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সম্প্রতি অলাহাবাদ হাইকোর্টের আইনজীবীরা বিচারপতি যশবন্ত বর্মার দিল্লি থেকে অলাহাবাদে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিচারপতি বর্মা বর্তমানে একটি নগদ উদ্ধার বিতর্কে জড়িত।
কলকাতা হাইকোর্ট (high court) বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরি ক্লাব এবং ইনকর্পোরেটেড ল সোসাইটির দুই পৃষ্ঠার এই চিঠিতে বিচারপতি শর্মার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর এবং ৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টে পাঠানো হুইসলব্লোয়ার ইমেলগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা বিনীতভাবে আপনার মহামান্য ও কলেজিয়ামের কাছে ২৭ মার্চের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, পর্যালোচনা এবং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।”
আরো দেখুন মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগে বিজেপিকে সমর্থন, কার্তিক মহারাজের বিস্ফোরক মন্তব্য
চিঠির অভিযোগ
আইনজীবী সংগঠনগুলোর দাবি, বিচারপতি শর্মার প্রস্তাবিত স্থানান্তর “ন্যায়বিচার প্রশাসনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিয়মিত স্থানান্তরের” আওতায় পড়ে না। তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে এই স্থানান্তরের পিছনে বিচারপতির কার্যপ্রণালী ও সততা সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “অভিযোগে উল্লিখিত বিবরণগুলো কেবল উদ্বেগজনক নয়, অত্যন্ত বিরক্তিকরও।” আইনজীবীরা মনে করেন, এই ধরনের স্থানান্তর কলকাতা হাইকোর্টের মর্যাদা ও সুনামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে বিচারপতি শর্মার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এই অভিযোগগুলোর বিষয়বস্তু প্রকাশ না করলেও, সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে এগুলো গুরুতর এবং বিচারপতির আচরণ ও কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। তারা বলেছে, “কলকাতা হাইকোর্টের মতো একটি সম্মানিত প্রতিষ্ঠানে এমন বিচারপতির আগমন আমাদের আইনজীবী সম্প্রদায়ের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রতিবাদের পটভূমি
এই চিঠি এমন এক সময়ে লেখা হয়েছে যখন এলাহাবাদ হাইকোর্টের (high court) আইনজীবীরা বিচারপতি যশবন্ত বর্মার স্থানান্তরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে নগদ উদ্ধার সংক্রান্ত একটি বিতর্ক চলছে, যা তাকে দিল্লি থেকে অলাহাবাদে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের পিছনে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কলকাতার আইনজীবীরা আশঙ্কা করছেন যে একই ধরনের পরিস্থিতি তাদের কোর্টেও ঘটতে পারে। তারা বলছেন, “আমরা চাই না কলকাতা হাইকোর্ট এমন বিচারপতিদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুক, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”
কলকাতা হাইকোর্টের (high court)মর্যাদা রক্ষার দাবি
চিঠিতে তিনটি সংগঠন জোর দিয়ে বলেছে যে কলকাতা হাইকোর্ট ভারতের প্রাচীনতম হাইকোর্টগুলোর একটি এবং এর একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। তারা লিখেছে, “এই আদালতের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরা মনে করি, এই ধরনের স্থানান্তর সিদ্ধান্ত আমাদের আদালতের সুনামের উপর কালিমা লেপন করতে পারে।” তারা প্রধান বিচারপতির কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে এবং স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি তুলেছে।
বিচারপতি শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ
চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত হুইসলব্লোয়ার ইমেলগুলোতে বিচারপতি শর্মার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। যদিও এই অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, আইনজীবী সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে এগুলো তাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। তারা বলেছে, “এই অভিযোগগুলো যদি সত্যি হয়, তবে এটি বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলবে।” তারা কলেজিয়ামের কাছে এই অভিযোগগুলোর তদন্তের দাবিও জানিয়েছে।
আইনজীবীদের অবস্থান
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা এই স্থানান্তরকে একটি “অপ্রত্যাশিত ও অযৌক্তিক” পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, সাধারণত বিচারপতিদের স্থানান্তর ন্যায়বিচার প্রশাসনের প্রয়োজনে করা হয়, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তেমন কোনো যুক্তি দেখা যাচ্ছে না। একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা স্পষ্ট যে বিচারপতি শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে তাকে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে। আমরা এটি মেনে নিতে পারি না।”
কলেজিয়ামের ভূমিকা
ভারতের বিচারপতি নিয়োগ ও স্থানান্তরে কলেজিয়ামের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে। এই ঘটনায় কলকাতার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি ও কলেজিয়ামের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, “কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না হলে আমরা প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হব।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই চিঠির পর প্রধান বিচারপতি ও কলেজিয়াম কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার বিষয়। যদি স্থানান্তর প্রত্যাহার না হয়, তবে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীদের বৃহত্তর আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা ভারতীয় বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের এই পদক্ষেপ তাদের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষার একটি শক্তিশালী প্রয়াস। এখন সবার নজর প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।