মহরমের তাজিয়া নিয়ে রণক্ষেত্র মালদা, নীরব পুলিশ

মালদার (Malda) ইংরেজবাজার থানার নরহাট্টা জিপির লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে মহরমের তাজিয়া শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অভিযোগ, বিপুল সংখ্যক মুসলিম হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ঘরবাড়ি, দোকান ও…

Malda hindu muslim dispute

মালদার (Malda) ইংরেজবাজার থানার নরহাট্টা জিপির লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে মহরমের তাজিয়া শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অভিযোগ, বিপুল সংখ্যক মুসলিম হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ঘরবাড়ি, দোকান ও সম্পত্তি ভাংচুর করেছে।

এই ঘটনায় স্থানীয় শান্তিপ্রিয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

   

লক্ষ্মীকান্তপুরে কী ঘটেছিল?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহরম উপলক্ষে তাজিয়া শোভাযাত্রার সময় লক্ষ্মীকান্তপুর (Malda) গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় একটি দল প্রবেশ করে। অভিযোগ, এই দল বিনা প্ররোচনায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকান ও সম্পত্তির উপর হামলা চালায়। ভাংচুরের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।

এই ঘটনায় (Malda) বেশ কয়েকটি দোকান ও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ধরনের হামলা তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনের সময়ও ঘটেছে, যেমন দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা বা রথযাত্রার মতো অনুষ্ঠানে। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এই নীরবতা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অসন্তোষ ছড়িয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পটভূমি

সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মালদার (Malda) মতোই মোথাবাড়ি, মুর্শিদাবাদ, মহেশতলা এবং অন্যান্য এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় শতাধিক মানুষ মালদায় আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়া, মাহেশতলায় তুলসী মঞ্চ নির্মাণকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের উপর হামলা ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনাগুলি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতির ইঙ্গিত দেয়।

লক্ষ্মীকান্তপুরের (Malda) ঘটনা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসার সাম্প্রতিক উদাহরণ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মহরমের তাজিয়া শোভাযাত্রার সময় হিন্দু এলাকায় প্রবেশ করে বিনা প্ররোচনায় হামলা চালানো হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র লক্ষ্মীকান্তপুরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাজ্যের অন্যান্য অংশেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, বীরভূমের সাঁইথিয়ায় মহরমের তহবিলের জন্য হিন্দুদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা দাবি ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রশাসনের ভূমিকা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া (Malda)

লক্ষ্মীকান্তপুরের (Malda) ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তোষণ নীতির কারণে পুলিশ ও প্রশাসনের হাত বাঁধা রয়েছে। বিরোধী দলনেতা সভ্যেন্দু অধিকারী এই ধরনের ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘হিন্দু-বিরোধী’ মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি মালদা, মুর্শিদাবাদ ও মাহেশতলার ঘটনার পর দাবি করেছেন, হিন্দুদের উপর নির্বিচারে হামলা চলছে এবং রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এই সহিংসতাকে উৎসাহিত করছে।

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার এই ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগের হিংসার ঘটনায় বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের ঘোষণা করেছিলেন, তবে লক্ষ্মীকান্তপুরের ঘটনায় এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব

লক্ষ্মীকান্তপুরের (Malda) হিন্দু বাসিন্দারা এই ঘটনার পর থেকে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনের সময়ও এই ধরনের হামলার শিকার হতে হয়। দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা বা রথযাত্রার মতো উৎসবে বাধা দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বারবার ঘটছে।

এই পরিস্থিতি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার (Malda) অনুভূতি তৈরি করছে।কেউ কেউ দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ নীতি এই ধরনের ঘটনাকে উৎসাহিত করছে। অভিযোগ, তৃণমূল সরকার তাদের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষার জন্য কিছু সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, যার ফলে হিন্দুদের উপর হামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলার বুকে বার বার এই ধরণের ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সামনে কী?

লক্ষ্মীকান্তপুরের (Malda) ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশ এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনই এই অরাজকতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়ছে যাতে তারা দ্রুত এবং নিরপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

ক্লাসিক ফুটবল অ্যাকাডেমির এই তরুণকে দলে টানতে চলেছে কেরালা

মালদার (Malda) এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি প্রতিফলন। পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সকল পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতার প্রয়োজন। লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দারা এখন শান্তি ও নিরাপত্তার প্রত্যাশায় রয়েছেন, এবং এই ঘটনা রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিপ্রকৃতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।