গুপ্তধন না পেয়ে সোনার গয়না, লক্ষাধিক টাকা নিয়ে চম্পট দুষ্কৃতীদের! পুনরায় আসার হুমকি

পটাশপুর: ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে। গুপ্তধনের খোঁজে এক গৃহস্থ বাড়িতে ডাকাতি’র জন্য হাজির হয় দুষ্কৃতীরা। চঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটছে পূর্ব মেদিনীপুর…

পটাশপুর: ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে। গুপ্তধনের খোঁজে এক গৃহস্থ বাড়িতে ডাকাতি’র জন্য হাজির হয় দুষ্কৃতীরা। চঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর থানায় মুস্তাফাপুর গ্রামে। ভোররাতে পরিবারের সদস্যদের বেঁধে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ১০-১২ জনের ডাকাত দল দেড়-দুই ঘন্টা ধরে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। বাড়ির মেঝে খুঁড়ে শুরু করে গুপ্তধনের সন্ধানও। কিন্তু গুপ্তধনের কোথাও সন্ধান পায়নি। এরপর নগদ ৩০ হাজার টাকা, প্রায় ১০ ভরি সোনার গয়না, রুপোর মূর্তি,গয়না, পিতল ও কাঁসার বাসন-কোসন, ৩ টি মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

Advertisements

এর আগে পরিবারের ৩ সদস্যকে একটি ঘরে মধ্যে আটকে রেখে বাইর থেকে দরজায় শিকল তুলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তার কিছুক্ষণ পর আতঙ্ক কাটিয়ে চিৎকার শুরু করেন গৃহবন্দি অতুল বেরার বাড়ির সদস্যরা। গ্রামবাসীরা এসে উদ্ধার করেন ঘরবন্দি সদস্যদের। এদিকে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় পটাশপুর থানায় পুলিশ। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ ও স্থানীয় সূএে জানা গেছে, পটাশপুর থানায় মুস্তাফাপুর গ্রামে অতুল বেরার বাড়িতে মঙ্গলবার ভোররাতে হাজির হয় ১০-১২ জনের ডাকাত দল। এদিকে অতুল বেরা পেশায় কৃষক। ফাঁকা মাঠে বাড়ি। ২০০ মিটারের মধ্যে আর কোনও বাড়ি নেই। অতুলবাবুর ৬ মেয়ে ও এক ছেলে। ৫ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অপর মেয়ে ও ছেলে কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকে। বাড়িতে অতুলবাবু, তাঁর স্ত্রী কল্পনা থাকেন।

কিছুদিন হল দিল্লির শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে সঙ্গে থাকছেন তাঁদের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। এদিন রাত ১২ টার পর খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বাড়ির সকলে। এদিকে নতুন পাকা বাড়ির দোতলার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন অতুলবাবু। নিচতলার বারান্দার ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। এরপর পৌনে বারোটা নাগাদ শুরুতে মেরেধরে নিচে নামিয়ে এনে বেঁধে ফেলা হয় পরিবারের সদস্যদের। আতলুবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে বেদম মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারের চোটে চোখ- মুখ ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। বুকে, পেটেও লাথি মারা হয়। তবে অনুরোধ মেনে অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়াঙ্কার ওপর সেভাবে অত্যাচার চালায়নি দুষ্কতীরা। তবে তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গোটা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় দুষ্কতীরা। আলমারি, বাক্সের চাবি বের করে নেয়। গুপ্তধনের জন্য পুরোনো মাটির বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে। এরপর সেখানে গিয়ে শুরু করে চলে মেঝে খোঁড়াখুঁড়ি। কাঁঠাল গাছ বেয়ে চিলেকোঠার দরজা খুলে দুষ্কতীরা বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করেছে বলে মনে করেছে পরিবারের সদস্যরা থেকে পুলিশ।

ঘটনা প্রসঙ্গে পটাশপুর থানায় ওসি রাজু কুণ্ডু বলেন, “লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

বাড়ির মালিক অতুল বেরা বলেন, “ছাদের ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। আচমকা একজন এসে মারধর শুরু করে। তারপর বেঁধে ফেলে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে। চিৎকার করলে গুলি করে দেবে বলে। এরপর নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে। দেখি স্ত্রীকেও বেঁধে ধরে মারধর করছে আরও কয়েকজন। আর একদল মারতে মারতে বের করে নিয়ে আসে মেয়েকে। সে অন্তঃসত্ত্বা তাকে মারধর না করতে অনুরোধ করি আমরা। তারপর তাকে আর মারধর করা হয়নি। ওর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখে গোটা বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে দুষ্কৃতীরা। তবে দুষ্কতীদের প্রত্যেকের মুখ কালোকাপড়ে ঢাকা ছিল।”

অন্যদিকে

অতুলের মেয়ে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “দুষ্কৃতীরা আবারও আসবে বলেছে। গুপ্তধন না পেলে ভাইকে খুন করবে বলে হুমকিও দিয়ে গেছে। কিন্তু আমরাই জানি না গুপ্তধন কোথায় রয়েছে। আমরা ৭ ভাই-বোন আর বাবা মিলে গায়ে গতরে খেটে বাড়ি বানিয়েছি।”

স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস খান বলেন, “যেহেতু এক সময় গুপ্তধন প্রাপ্তির খবর রটেছিল, তাই মাটির নীচে গুপ্তধন রয়েছে, ভেবে কোনও চক্র এমন কাজ করতে নেমেছিল। মূল্যবান সম্পদের আশাতেই বাড়ির মেঝে খুঁড়ে ফেলে তারা। ভালো করে তদন্ত হলেই আসল উদ্দেশ্য জানা যাবে।”