মুর্শিদাবাদ পরিস্থিতি ‘ঠাণ্ডা’ করতে ময়দানে বিএসএফ আইজি করণি সিং

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে (Shamshergan) ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদের নামে সাম্প্রতিক অশান্তি ও তাণ্ডবের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF)। শনিবার বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর…

IG Karni Singh Visits Violence-Hit Areas

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে (Shamshergan) ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদের নামে সাম্প্রতিক অশান্তি ও তাণ্ডবের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF)। শনিবার বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) করণি সিং সেখাওয়াত সামশেরগঞ্জে পৌঁছে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। যে এলাকায় বিএসএফকে গুলি চালাতে হয়েছে এবং বিএসএফের গাড়ি আক্রান্ত হয়েছে, সেসব এলাকা ঘুরে তিনি পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করেন। সামশেরগঞ্জ থেকেই তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “যতদিন পুলিশ চাইবে, ততদিনই বিএসএফ এই এলাকায় মোতায়েন থাকবে। জওয়ানদের সবদিক থেকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশৃঙ্খলাকে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।” পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিএসএফ তৎপর রয়েছে বলেও তিনি জানান।

আইজি’র বক্তব্য: পুলিশের উপর নির্ভর বিএসএফের উপস্থিতি

করণি সিং সেখাওয়াত সামশেরগঞ্জে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আমরা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছি। পাঁচটি বিএসএফ কোম্পানি ইতিমধ্যে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের কাজ পুলিশকে সহায়তা করা, স্বাধীনভাবে কিছু করা নয়। পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কাজ করব। আশা করছি, শিগগিরই এলাকায় শান্তি ফিরবে। যদি পুলিশ আরও বাহিনীর প্রয়োজন মনে করে, আমরা তাও সরবরাহ করব। বিএসএফ সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।” তিনি আরও জানান, বিএসএফ জওয়ানদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা বা উসকানিমূলক কার্যকলাপকে কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বিএসএফ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তবে তাদের উপস্থিতির মেয়াদ পুরোপুরি নির্ভর করছে রাজ্য পুলিশের সিদ্ধান্তের উপর।

শনিবার রাতে নতুন করে অশান্তি

সূত্রের খবর, শনিবার রাতেও সামশেরগঞ্জের একাধিক এলাকায় নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে। হিজলতলায় বিএসএফের গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকা থমথমে হয়ে আছে। রবিবার সকাল থেকে পুলিশ ও আধাসেনা বাহিনী এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু করেছে। কোথাও কোনও জমায়েত দেখলেই তা তৎক্ষণাৎ হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, বিএসএফের টহলও অব্যাহত রয়েছে। ধুলিয়ান পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা এবং পাশের গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের নজরদারি জারি থাকলেও, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF)-এর সঙ্গে সমন্বয়ে পুলিশ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্ট Chariara করছে।

পুলিশ ও বিএসএফের সমন্বিত প্রচেষ্টা

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এরপর থেকে বিএসএফ পাঁচটি কোম্পানি নিয়ে সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান এবং সুতি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। শনিবার বিএসএফের আইজি করণি সিং সেখাওয়াত সামশেরগঞ্জ থানায় পৌঁছে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের পর তিনি দ্রুত বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধুমাত্র জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় একদিনে ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

Advertisements

এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি

সামশেরগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে চলা অশান্তির ঘটনা এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গভীর প্রভাব ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শনিবার রাতে হিজলতলায় বিএসএফের গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাথর ছোঁড়া, সম্পত্তি ভাঙচুর এবং পুলিশ ও বিএসএফের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা এলাকায় উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ও বিএসএফের সমন্বিত টহল এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ধুলিয়ান পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় এবং পাশের গ্রামগুলিতে পুলিশ ও বিএসএফের রুট মার্চ চলছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

সামশেরগঞ্জে এই তাণ্ডবের ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম দুজনেই অশান্তির জন্য বহিরাগত দুষ্কৃতিদের দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, বাইরে থেকে লোকজন এসে পরিকল্পিতভাবে এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং পুলিশের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যা এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সামশেরগঞ্জে ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদের নামে চলা তাণ্ডব মুর্শিদাবাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি করণি সিং সেখাওয়াতের পরিদর্শন এবং তাঁর কঠোর বক্তব্য এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও বাহিনীর দৃঢ়তার প্রতিফলন। পুলিশ ও বিএসএফের সমন্বিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে, শনিবার রাতের ঘটনা এবং হিজলতলায় বিএসএফের গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা থেকে স্পষ্ট, এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ ও বিএসএফের সতর্কতা এবং কঠোর পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তির প্রত্যাশা করছেন, এবং এই ঘটনার পিছনে থাকা মূল দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য বাহিনীর উপর নির্ভর করছেন।