BSF Smuggler Encounter: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আবারও উত্তেজনা। একদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি, অন্যদিকে বাংলাদেশি পাচারকারীদের হামলায় বিএসএফ-এর উপর আক্রমণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধুপুর সীমান্তে শনিবার রাতে বাংলাদেশি পাচারকারীরা বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা চালায়। পাচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে পাচারকারীরা। পাল্টা জবাবে বিএসএফ-এর পাম্প অ্যাকশন গান (পিএজি), একটি অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র, থেকে গুলি চালানো হলে এক পাচারকারী নিহত হয়।
স্থানীয় সূত্র এবং বিএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাতে মধুপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে একদল বাংলাদেশি পাচারকারী। এই দলটি সশস্ত্র ছিল এবং পাচারের সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানরা সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে পাচারকারীদের থামতে নির্দেশ দেন। কিন্তু পাচারকারীরা নির্দেশ অমান্য করে পাচারের সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশের দিকে পালানোর চেষ্টা করে। বিএসএফ জওয়ানরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে, পাচারকারীরা ধারালো অস্ত্র, লাঠি এবং পাথর নিয়ে জওয়ানদের উপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসএফ প্রথমে স্টান গ্রেনেডের মতো অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। কিন্তু পাচারকারীরা আক্রমণ অব্যাহত রাখায়, বিএসএফ পিএজি থেকে গুলি চালায়, যার ফলে এক পাচারকারী নিহত হয়।
নিহত পাচারকারীর পরিচয় এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা রবিবার সকালে মধুপুরে মৃতদেহটি দেখতে পান। বাগদা থানার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে এবং তদন্ত শুরু করেছে। বিএসএফ এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে মৃতদেহ হস্তান্তর এবং ঘটনার বিষয়ে আলোচনা হবে। এই ঘটনায় কোনো বিএসএফ জওয়ান আহত হননি বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি অংশ। গত কয়েক মাসে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং মুর্শিদাবাদের মতো এলাকায় বাংলাদেশি পাচারকারীদের সঙ্গে বিএসএফ-এর একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে, উত্তর ২৪ পরগনার কালাঞ্চি সীমান্তে পাচারকারীরা ফেন্সিডিল (কোডিন-ভিত্তিক নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ) পাচারের চেষ্টা করলে বিএসএফ তাদের বাধা দেয়, এবং হামলার প্রতিক্রিয়ায় এক পাচারকারী আহত হয়। একইভাবে, জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে ১৫-২০ জনের একটি দল বিএসএফ-এর উপর হামলা চালায়, যার ফলে এক পাচারকারী নিহত এবং এক জওয়ান আহত হয়। এই ঘটনাগুলি সীমান্তে পাচার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
বিএসএফ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, সীমান্তে ক্রমবর্ধ তীব্রতা এবং পাচারকারীদের সশস্ত্র হামলা জওয়ানদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ফেব্রুয়ারিতে, মালদা এবং মুর্শিদাবাদে বিএসএফ ইউনিফর্ম পরে গরু পাচারের চেষ্টাকারী তিন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। এই ধরনের ঘটনা পাচারকারীদের কৌশলের পরিবর্তন এবং সীমান্ত নিরাপত্তার জটিলতা প্রকাশ করে। বিএসএফ-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে সীমান্তে সজাগ রয়েছি। তবে, পাচারকারীদের আক্রমণাত্মক আচরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।”
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলেছেন। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা বিএসএফ-কে তাদের নিরাপত্তার জন্য “ত্রাণকর্তা” হিসেবে দেখেন। মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর স্থানীয়রা বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে তারা বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে।
পহেলগাঁওয়ে ২৬ জনের মৃত্যুর কারণে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে পাচারকারীদের হামলা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর চাপ বাড়িয়েছে। সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মধুপুরের ঘটনা ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা নীতির কঠোরতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা প্রকাশ করে।