২০২১ বিধানসভা ভোটের পর উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য ঘোষণা করার দাবি তুলে সরব হয়েছিল বিজেপি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা সংগঠনের নেতারা তখন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের জন্য ব্যাপক প্রচার চালায়। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। কারণ বাংলাভাগের জিগির তুলে বাঙালির মন জেতা যাবে না। এই বাস্তবটা দেরিতে হলেও বুঝতে পারে রাজ্য বিজেপি নের্তৃত্ব।
Rashtrapati Bhavan: বদলে গেল রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহ্যবাহী দু’টি হলের নাম!
এবার ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের কাছে গো-হারা হেরেছে বঙ্গ বিজেপি। আর সেই হতাশা থেকেই কী ‘বঙ্গ-ভাগের ভূত’ ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল শুভেন্দু-সুকান্তদের?
বুধবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব উন্নয়ণ বিভাগের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলে ফের বিতর্ক বাড়িয়েছেন। গতকাল তিনি একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে যুক্ত করার প্রস্তাব জমা দিয়েছি। এখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি থেকে এই অঞ্চল উপকৃত হবে। টাকা বেশি করে পাবে উত্তরবঙ্গ। জেলাগুলির উন্নতি হবে। আশা করি এতে করে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি থাকবে না এবং সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা পাবো আমরা।”
NDA-তে চূড়ান্ত ডামাডোল! হাতছাড়া হবে মহারাষ্ট্র? তড়িঘড়ি বৈঠকে মোদী
সুকান্তের এই প্রস্তাবের মধ্যে রাজ্যভাগের বীজ লুকিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। তাঁর কারণ, সংগঠনের দিক থেকে উত্তরবঙ্গে বিজেপি বরাবরই তৃণমূলের থেকে এগিয়ে রয়েছে। কোচবিহারে নীশীথ প্রামাণিক হারলেও উত্তরবঙ্গের বাকি সাতটি জেলার ভোট শতকরায় এগিয়ে গেরুয়া শিবির। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সক্রিয়তায় কোনওভাবেই রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন মাঠে মারা যাচ্ছে বিজেপির। সম্প্রতি একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে উত্তরবঙ্গে নজর ফেরানোর ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কারণ ২৬ বিধানসভা ভোট পাখির চোখ।
রাজ্যের জমি অধিগ্রহণে অনীহা, বাংলায় রেল প্রকল্পে ঢিলেমির কারণ: রেলমন্ত্রী
তখন উত্তর-পূর্ব উন্নয়ণ পর্ষদের অর্থানুকূল্যেই যদি উত্তরবঙ্গের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো যায়, তাতে আখেড়ে লাভ হতে পারে মুরলীধর সেন লেনের। কারণ তাহলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ণ থেকে সাংগঠনিক প্রচার তৃণমূলের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবে শুভেন্দুরা। এবং উন্নয়ণের লুকোনো তাস খেলে ভোটব্যাঙ্ককেও শক্তিশালী করতে পারবে। দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গে রাভা, রাজবংশী, গোর্খার মতো উপজাতিগুলি গোর্খাল্যান্ডের দাবি আবার পৃথক কামতারপুর রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছে। এনিয়ে অতীতেও বিজেপির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এমনকী বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি গোষ্ঠীগুলির পালে হাওয়া লাগাতে সুকান্ত মজুমদারেরা এই ধরনের কৌশলী মন্তব্য করেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অতীতে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করারও জিগির তুলেছিলেন মুরলীধর সেন লেনের নেতারা। সেই দাবিও কিছুদিন বাদে কর্পূরের মতো উবে যায়।
দুয়ারে করজোড়ে ক্ষমা চাইছেন শত্রুঘ্ন সিনহারা! মমতার রোষে আজব কান্ড মালদহতে
এদিকে উত্তরবঙ্গ ‘অস্বস্তি’ নিয়ে সুকান্তের এই নয়া প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন কালিম্পঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ ভাগ কোনওদিন সম্ভব নয়। এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব দাবি।”
উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব উন্নয়ণ পর্ষদে সংযুক্ত করা সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা সুকান্তের। ভোটে হেরে হতাশা ঝোড়ে পড়ছে সুকান্তদের গলায়। এই সুরেই বিজেপিকে কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার।